• Fri. Nov 22nd, 2024

Basic News24.com

আমরা সত্য প্রকাশে আপোষহীন

বাংলাদেশকে ট্রানজিট দিল ভারত

Bybasicnews

Sep 8, 2022

♦ বিনা শুল্কে ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশের পণ্য যেতে পারবে তৃতীয় দেশে ♦ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন চায় বাংলাদেশ ♦ সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামাতে ঐকমত্য ♦ তিস্তায় বাংলাদেশের তাগিদ, ভারতের আগ্রহ ফেনী নদীতে ♦ চলতি বছরই সমন্বিত অর্থনৈতিক চুক্তির আলোচনা

 জুলকার নাইন, নয়াদিল্লি থেকে

বাংলাদেশকে ট্রানজিট দিল ভারত

বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে গতকাল নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বাংলাদেশ ও ভারতের ব্যবসায়ীদের মধ্যে সমঝোতা স্মারক বিনিময় হয় -পিআইডি

তৃতীয় যে-কোনো দেশে পণ্য পরিবহনে নিজ ভূখণ্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশকে ট্রানজিট দিল ভারত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের যৌথ বিবৃতিতে এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল ঢাকা ও নয়াদিল্লি থেকে একযোগে প্রকাশিত এ যৌথ বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের সব সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। ৩৩ দফার এ যৌথ বিবৃতি অনুসারে বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে একমত হয়েছে, তিস্তা চুক্তির জন্য আবারও অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ কিন্তু ভারত আগ্রহ দেখিয়েছে ফেনী নদীর বিষয়ে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন চেয়েছে বাংলাদেশ এবং চলতি বছরই বাংলাদেশ ও ভারত সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারি চুক্তি (সেপা) সইয়ের জন্য আলোচনা শুরু করতে সম্মত হয়েছে।

চার দিনের ভারত সফরে সোমবার দিল্লি পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তিনি বৈঠক করেন। এ সময় দুই দেশের মধ্যে সাতটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। তাঁর ভারত সফর উপলক্ষে গতকাল ঘোষিত দুই দেশের যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়- বাংলাদেশকে ট্রানজিট সুবিধার প্রস্তাব দিয়েছে ভারত অর্থাৎ বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য ভারতের স্থলবন্দর, বিমানবন্দর ও সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে নেওয়া যাবে। আর এ পরিবহনের জন্য বাংলাদেশকে কোনো শুল্ক ফি দিতে হবে না ভারতকে।যৌথ বিবৃতির ২০ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে তারা নির্দিষ্ট স্থল শুল্ক স্টেশন/বিমানবন্দর/সমুদ্রবন্দরের মাধ্যমে তৃতীয় দেশে পণ্য রপ্তানির জন্য ভারতের ভূখ  ব্যবহার করে বাংলাদেশকে বিনামূল্যে ট্রানজিটের প্রস্তাব দিয়েছে। তৃতীয় দেশে ট্রান্সশিপমেন্টের জন্য বন্দর অবকাঠামো ব্যবহার করার জন্য বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ভারতীয় পক্ষ। নেপাল ও ভুটানে পণ্য রপ্তানির জন্য ভারত বাংলাদেশকে ইতোমধ্যে বিনামূল্যে ট্রানজিট দিয়ে আসছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সদ্য উদ্বোধন হওয়া চিলাহাটি-হলদিবাড়ী রুটের মাধ্যমে ভুটানের সঙ্গে রেল যোগাযোগের অনুরোধ জানানো হয়েছে। ভারত এ রুটের কার্যকারিতা ও সম্ভাব্যতা যাচাই করে অনুরোধটি বিবেচনা করতে সম্মত হয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে চিলাহাটি-হলদিবাড়ী ক্রসিংসহ বন্দর নিষেধাজ্ঞাগুলো অপসারণের অনুরোধ করা হয়েছে। শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি দ্বিপক্ষীয় ও উপ-আঞ্চলিক রেল, সড়ক ও অন্যান্য সংযুক্তির বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে- উভয় নেতা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে প্রায় সব বিষয় নিয়েই আলাপ করেন। এর মধ্যে ছিল রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা, প্রতিরক্ষা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, বাণিজ্য ও কানেকটিভিটি, পানিসম্পদ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, উন্নয়ন সহযোগিতা, সংস্কৃতি এবং মানুষে মানুষে যোগাযোগসহ বিভিন্ন বিষয়। পাশাপাশি তাঁরা ভবিষ্যতে নতুন নতুন ক্ষেত্র যেমন পরিবেশ, জলবায়ু, সাইবার নিরাপত্তা, তথ্যপ্রযুক্তি, মহাকাশবিজ্ঞান, পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ও সমুদ্র অর্থনীতিতে সহযোগিতার বিষয়ে সম্মত হয়েছেন। দুই নেতা চলমান রেল সহযোগিতা ও উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

নিরাপদ সীমান্ত ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতে ত্রিপুরায় সীমান্ত বেড়া নির্মাণসহ সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে বাকি থাকা সব উন্নয়নকাজ শেষ করার বিষয়ে একমত হয়েছেন তাঁরা। সেই সঙ্গে সীমান্তে প্রাণহানির সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাওয়ায় দুই শীর্ষ নেতা সন্তোষ প্রকাশ করেন। দুই পক্ষ সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনার বিষয়ে সম্মত হয়েছে। গত মাসে যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বিবৃতিতে বলা হয়- কুশিয়ারা নদীর পানি উত্তোলনের জন্য সমঝোতা স্মারক সই করার বিষয়টিকে দুই নেতা স্বাগত জানান। এর ফলে বাংলাদেশ সেচ সুবিধা পাবে এবং দক্ষিণ আসামে পানি প্রকল্পগুলোকে সহায়তা দেবে। পানি ব্যবস্থাপনার ব্যাপ্তি বাড়াতে যৌথ নদী কমিশনের সিদ্ধান্তে সন্তোষ প্রকাশ করেন দুই নেতা। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আরও নদ-নদীর তথ্য-উপাত্ত এক দেশ অন্য দেশকে পর্যালোচনা করার জন্য দেবে এবং অন্তর্বর্তীকালীন পানি চুক্তির খসড়ার কাঠামো তৈরি করবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অতীতের আলোচনাগুলোর কথা স্মরণ করিয়ে তিস্তার অন্তর্বর্তী পানি চুক্তি সইয়ের জন্য বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের অনুরোধ পুনর্ব্যক্ত করেছেন। অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনের অন্তর্বর্তী চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত হয়েছিল ২০১১ সালে। তবে ভারতীয় পক্ষ থেকে ভারতের ফেনী নদীর পানি বণ্টন চুক্তি দ্রুত কার্যকরের অনুরোধ জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ এ অনুরোধ বিবেচনায় নিয়েছে। তবে তিস্তার ক্ষেত্রে ভারতের কোনো অবস্থানের কথা নেই যৌথ বিবৃতিতে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশে গঙ্গার পানির সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারে যৌথ সমীক্ষার জন্য যৌথ কারিগরি কমিটি গঠনকে স্বাগত জানিয়েছেন। সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারি চুক্তি (সেপা) সইয়ের জন্য চলতি বছরই আলোচনা শুরু করতে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত। বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের সময়ে এবং দ্রুত সময়ে সেপা আলোচনা করতে দুই প্রধানমন্ত্রী নিজ নিজ দেশের বাণিজ্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন। যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়- সম্প্রতি চূড়ান্ত হওয়া সেপার মাধ্যমে উভয় দেশ লাভবান হওয়ার যৌথ সম্ভাব্যতা যাচাইকে স্বাগত জানিয়েছেন নেতারা। যৌথ বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়- হাসিনা ও মোদি দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সুবিধার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। স্থলবন্দরের অবকাঠামো জরুরি ভিত্তিতে উন্নয়ন ও অশুল্ক সুবিধা এবং বন্দর নিষেধাজ্ঞা তুলে দিতে জোর দেন। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সীমান্তে ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্টে (আইসিপি) আগরতলা-আখাউড়া থেকে শুরু করে সহজে নিষেধাজ্ঞা ছাড়াই বাজারে প্রবেশের ভারতীয় পক্ষ অনুরোধ পুনর্ব্যক্ত করে। উভয় নেতা পেট্রাপোল-বেনাপোল ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্টে (আইসিপি) দ্বিতীয় মালবাহী গেটের উন্নয়নে তহবিল দেওয়ার জন্য ভারতের প্রস্তাবের অগ্রগতিকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং দ্রুততম সময়ে কাজটি শেষ করার জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন। চাল, গম, চিনি, পিঁয়াজ, আদা, রসুনের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ভারত থেকে আমদানির ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন চেয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি করতে চাইবে, ভারত তা দিতে পারবে কি না এবং যতটুকু পণ্য দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেবে তা যাতে পূরণ করা হয় ভারতের কাছে এ নিশ্চয়তা চেয়েছে বাংলাদেশ। ভারতের নিজস্ব জোগান ব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের প্রস্তাব ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করবে বলে জানিয়েছে ভারত। বিবৃতিতে বলা হয়- দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং এশিয়ার মধ্যে ভারত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার হিসেবে আবির্ভূত হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন দুই নেতা। বিবৃতিতে বলা হয়- দুই দেশের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন দুই নেতা। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরিত ৫০ কোটি ডলারের সামরিক লাইন অব ক্রেডিটের অধীনে প্রকল্প চূড়ান্তকরণের জন্য দুই নেতা সম্মত হয়েছেন এবং এটি উভয় দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ভারত থেকে যান কেনার পরিকল্পনা চূড়ান্ত হওয়াকে স্বাগত জানিয়েছে ভারত। পাশাপাশি সমুদ্রে বৃহত্তর নিরাপত্তাব্যবস্থার জন্য কোস্টাল রাডার সিস্টেম স্থাপনে বাংলাদেশের সঙ্গে ২০১৯ সালে হওয়া চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছে ভারত।

যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে আলোচনা করেছেন। কভিড-১৯ মহামারি ও বৈশ্বিক পরিস্থিতির দরুন সরবরাহব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ার প্রেক্ষাপটে তাঁরা এ অঞ্চলের সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের স্বার্থে বন্ধুত্ব ও অংশীদারির চেতনায় ব্যাপকতর সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *