• Tue. Dec 3rd, 2024

Basic News24.com

আমরা সত্য প্রকাশে আপোষহীন

সাক্ষাৎকার : হানিফ সংকেত

Bybasicnews

Nov 1, 2022

প্রখ্যাত মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হানিফ সংকেত, গণমানুষের টিভি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানখ্যাত ইত্যাদির আকাশছোঁয়া দর্শকপ্রিয়তায় অনুষ্ঠানটি যেমন কালজয়ী হয়ে উঠেছে তেমনি তিনি হয়ে গেছেন কিংবদন্তি। এই খ্যাতিমান ব্যক্তিত্বের মুখোমুখি হয়েছিলেন – আলাউদ্দীন মাজিদ৩৫ বছরে টেলিভিশনে কত ধরনের অনুষ্ঠান এলো আর গেল কিন্তু ইত্যাদি তার শীর্ষস্থানটি ধরে রেখে এখনো একই অবস্থানে রয়েছে, এর গোপন রহস্য কী?

-এখানে গোপনীয় কিছু নেই, দর্শকরাই সব জানেন। বাংলাদেশে দুই ধরনের অনুষ্ঠান আছে- একটা হচ্ছে বাণিজ্যিক অন্যটি হচ্ছে দায়ভিত্তিক। এই দায় দেশের প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি, সংস্কৃতির প্রতি। সেই দায়বোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে যে অনুষ্ঠান হয় সেখানে ব্যবসার বিষয়টি মুখ্য থাকে না। বরং অনুষ্ঠানটিই হয় মুখ্য। আর বাণিজ্যিক অনুষ্ঠানগুলোর গর্জন বেশি হলেও অর্জন কম। অনেকটা ‘ওয়ান টাইম ইউজ’ সামগ্রীর মতো। ইত্যাদি বাণিজ্যিক নয়, দায়বোধ থেকে করি। ইত্যাদির একটা আর্কাইভ ভ্যালু রয়েছে। নির্ভুল বলে অনেকে এখান থেকে তথ্যও সংগ্রহ করেন।

প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে যখন শুটিং করেন তখন হাজার হাজার দর্শক কীভাবে আসে?

-প্রাণের টানে। ইত্যাদির প্রাণই তো সাধারণ মানুষ। আর সাধারণ মানুষ নিয়ে অনুষ্ঠানটি করি বলেই শুটিং দেখার জন্য কেউ বাড়ির ছাদে, টিনের চালে, গাছের ডালে, পানিতে নেমেও তা দেখেন। আমাদের অনুষ্ঠানে দর্শকের শ্রেণিবিন্যাস থাকে না। সবাইকে একই ধরনের চেয়ারে বসতে হয়। নেই কোনো বিশেষ অতিথি, প্রধান অতিথি। আমাদের কাছে সবাই বিশেষ অতিথি। যে কারণে ইত্যাদিকে বলা হয় গণমানুষের অনুষ্ঠান।

আজকাল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, চ্যানেল, সংগঠন পুরস্কার দিচ্ছে, এ নিয়ে আপনার বক্তব্য কী?

-এগুলোর তেমন বিশেষ কোনো মূল্য নেই আমার কাছে। আমি এগুলোতে কখনো যাই না। কেউ দিতে চাইলে বিনয়ের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করি। দেশের একটি প্রথম শ্রেণির জাতীয় দৈনিকের দেওয়া পুরস্কারই পরপর আটবার নেওয়ার পর বিনয়ের সঙ্গে তা ফিরিয়ে দিয়েছি, যাতে নতুনদের দেয়। আমার কাছে দর্শকের ভালোবাসাই বড় পুরস্কার।

আমাদের দেশের দর্শকদের সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?

-দর্শকদের মধ্যে শ্রেণিভেদ আছে। রুচিশীল দর্শক যেমন আছেন, বিকৃত রুচির দর্শকও আছেন। এদের জন্যও একশ্রেণির নির্মাতা আছেন। তবে এদের সংখ্যা খুবই কম। আপনি ঠিক পথে থাকলে দর্শকরা বাঁকা পথে হাঁটবে না। একটা কথা মনে রাখবেন, আপনি সবকিছুকেই ফাঁকি দিতে পারবেন, দর্শকদের ফাঁকি দিতে পারবেন না। যে মুহূর্ত থেকে দর্শকদের ফাঁকি দিবেন, সেই মুহূর্ত থেকে দর্শকও আপনাকে ফাঁকি দিয়ে চলে যাবে। তারা যাতে না যায় তা মাথায় রেখে আমরা কাজ করি। সে জন্য শুধু টিভিতেই নয়, ইউটিউবেও আমাদের অনুষ্ঠান ট্রেন্ডিংয়ে থাকে।

‘ইত্যাদি’র কল্যাণে আজ পলান সরকারের পাঠাগার কিংবা গহের আলীর লাগানো তাল গাছের সারি দেখতে হাজার হাজার মানুষ ছুটে যান রাজশাহী বা মহাদেবপুরের গহিন গ্রামে। প্রতিবেদনগুলো তো সবার চোখের সামনেই ছিল, তারপরও করেনি, কেন?

-দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার। তারা হয়তো বিষয়গুলোকে সেভাবে গুরুত্ব দেয়নি। শুধু তাই নয়, সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরের পাড়ে টেকেরঘাট কিংবা সুন্দরবনের পাশে শ্যামনগরের কথাই ধরুন, এসব জায়গায় আগে কখনো পর্যটকরা যেত না। নৌযান ছাড়া কোনো যোগাযোগব্যবস্থা ছিল না। থাকার জায়গা ছিল না। ইত্যাদি করার পর থেকে এসব জায়গা এখন আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। গড়ে উঠেছে হোটেল, রেস্তোরাঁ, রাস্তাঘাট আরও কত কিছু। টেকসই উন্নয়নের যে বিষয়টি এখন পুরো বিশ্বে আলোচিত, তাও ইত্যাদির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কারণ তিন যুগ আগের দর্শক এখনো একই আগ্রহ আর নিষ্ঠার সঙ্গে ইত্যাদি দেখে তৃপ্তির হাসি হাসেন। যুগ যুগ ধরে দর্শক ধরে রাখার এই টেকসই পদ্ধতিকে আপনি কী বলবেন।

বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো গবেষণা হওয়া উচিত। আজকাল প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বা নাটক ও নাট্যতত্ত্ব- এসব বিষয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর করা হাজার হাজার তরুণ-তরুণী কাজ করছে বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেলে, পত্র-পত্রিকায়। সেখানে গবেষণা হিসেবে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। আমাদের চ্যানেলগুলোতে অডিয়েন্স রিসার্চ বা ক্রিয়েটিভ সেল বলে কিছু আছে কি?

-আমার মনে হয় নেই। থাকলে তো তাদের ক্রিয়েটিভিটি বাড়ার কথা। আছে স্পন্সর আর বিজ্ঞাপনদাতা খোঁজার দৌড়। কীভাবে স্পন্সর ধরা যাবে, স্পন্সর কি অনুষ্ঠান খাবে-সেভাবেই অনুষ্ঠান নির্মাণ হবে। আর তাই তো নাটকে এত গালি আর টয়লেট দৃশ্যের সংযোজন। শিল্প-সংস্কৃতির সঙ্গে খাদ্যকে তুলনা করলে তো তার শিল্পমান থাকে না।

টেলিভিশনে-ওয়েব সিরিজে এমন কী ছবিতেও যে হারে অশ্লীল সংলাপ, অশ্রাব্য গালি, অশোভন দৃশ্য দেখা যাচ্ছে- এভাবে চলতে থাকলে তো পরিবারের সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কোনো কিছুই দেখা যাবে না। এ থেকে পরিত্রাণের উপায় কী?

-পরিত্রাণ তো দূরের কথা, যেভাবে একের পর এক সিরিয়ালে, ওয়েব সিরিজে গালির উত্তরণ ঘটছে, তাতে ভবিষ্যতে গালিমুক্ত সংলাপ থাকবে কি না সেটিই সন্দেহ। আজকাল বিদগ্ধ বলে কথিত ব্যক্তিরাও এর পৃষ্ঠপোষকতা করছেন। এরাও এখন গালিকে শিল্পের অলংকার ভাবা শুরু করেছেন। যে কারণে সুস্থ দর্শকদের অসুস্থ হওয়ার সময় এসেছে।

এবার শিল্পী আকবর প্রসঙ্গে কথা বলতে চাই। আকবরের সুস্থ অবস্থায় কোনো চ্যানেলে তাঁকে গাইতে এমনকি পত্র-পত্রিকায়ও তাঁর তেমন প্রচার লক্ষ্য করা যায়নি। একমাত্র ইত্যাদিতেই ছিল তাঁর যত প্রচার-প্রচারণা, তাঁর উত্থান। কিন্তু এখন সেই আকবরের অসুস্থতাকে পুঁজি করে অনেকে কনটেন্ট ব্যবসায় নেমেছেন। টিভি ক্যামেরা নিয়ে গিয়ে অর্থ সাহায্য করছেন, এভাবেই জমে উঠেছে বিভিন্ন ব্যক্তির কনটেন্ট আর ভিউ বাণিজ্য। এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য জানতে চাই।

-এ ব্যাপারে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। আপনারা সবই জানেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে গত কয়েক বছরে তার অসুস্থতার জন্য যতটুকু আর্থিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা করেছি তা ক্যামেরার সামনে বা কাউকে জানিয়ে করার প্রয়োজন মনে করিনি। শুধু আকবরই নয়, অনেক শিল্পীর অসুস্থতার সময় আমি তাদের পাশে ছিলাম। তবে সবসময় চেষ্টা করেছি কাজগুলো ক্যামেরার পেছনে থেকে করতে। আর আকবরের জন্য এখন কে কী করছেন, কী উদ্দেশ্যে করছেন- সেটাও সবাই দেখছেন, সবই দৃশ্যমান। আকবর অত্যন্ত ভাগ্যবান কারণ স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। ২৪ লাখ টাকা দিয়েছেন। এ ছাড়াও অনেকে সাহায্য-সহযোগিতা করছেন। এর চাইতে আর কি চাওয়ার থাকতে পারে? আমি তার দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *