জাতীয় পরিচয়পত্র কার্যক্রম নিজেদের অধীনে রাখা এবং ইসি সচিবালয়ে সব ধরনের প্রেষণে পদায়ন বন্ধসহ চার দাবির বিষয়ে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে নির্বাচন কমিশনকে পাঁচ দিনের আলটিমেটাম দিয়েছে কর্মকর্তারা। দাবি আদায় না হলে ৫ ডিসেম্বর থেকে আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন এই সাংবিধানিক সংস্থার কর্মকর্তারা। গতকাল প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিবের কাছে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দিয়েছে ইসি কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন।
ইসির কর্মকর্তাদের চার দাবির মধ্যে রয়েছে- (১) জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখা; (২) নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে সব ধরনের প্রেষণে পদায়ন বন্ধ শূন্য পদ পূরণে ইসির দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ; (৩) ইসির প্রস্তাবিত ইভিএম প্রকল্পে লজিস্টিকসহ (ওয়্যারহাউস ও যানবাহন) অনুমোদনে ইসির দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ এবং প্রস্তাবিত সাংগঠনিক কাঠামো দ্রুত সময়ে বাস্তবায়নে ইসির কর্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। ইসির কর্মকর্তারা চিঠিতে বলেছেন, আগামী ৪ ডিসেম্বরের মধ্যে চার দাবির বিষয়ে নির্বাচন কমিশন দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ না নিলে ৫ ডিসেম্বর কালোব্যাজ ধারণ এবং ৮ ডিসেম্বর অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করা হবে। এরপরও দাবি আদায় না হলে সংগঠনের কার্যনির্বাহী পরিষদের সিদ্ধান্তের আলোকে আন্দোলনের কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা হবে। ঘোষিত কর্মসূচি নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, এনআইডি, ইটিআই ও মাঠপর্যায়ের কার্যালয়ে একযোগে পালন হবে। ইসি কর্মকর্তাদের আলটিমেটামের চিঠির বিষয়ে ইসি সচিব জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন ২৬ নভেম্বর একটি মিটিং করেছে। সেই মিটিংয়ে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো তারা আমাদের জানিয়েছে। পর্যায়ক্রমে তারা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং বিভাগকে এসব সিদ্ধান্ত জানাবেন।’
তিনি বলেন, ‘অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন বেশকিছু সিদ্ধানের কথা তুলে ধরেছেন। প্রথম হলো- কমিশনে শূন্য পদ পূরণ করা। এক্ষেত্রে আমরা মনে করি, যারা যোগ্যতা অর্জন করবেন তাদের চাকরি বিধি অনুযায়ী শূন্য পদোন্নতি এবং শূন্য পদ পূরণে উদ্যোগ নেব।’ জাহাংগীর আলম বলেন, দ্বিতীয় হচ্ছে- ইভিএমের লজিস্টিক বিষয় দৃশ্যমান করা। এ জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। সেটি একনেকে উঠবে। তারা অনুমোদন দিলে তখন এ বিষয়ে বলা যাবে। একনেকে অনুমোদনের আগে কোনো কিছু বলা যৌক্তিক হবে না। সাংগঠনিক কাঠামোর প্রসঙ্গ টেনে ইসি সচিব বলেন, ‘অনেক পদ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সেটা সাংগঠনিক কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এটির কার্যক্রম চলমান। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে যে কমিটি আছে সেখানে বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। এরপর এটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যাবে। মন্ত্রণালয়ের ভেটিং সাপেক্ষে এটি যাবে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। অর্থ মন্ত্রণালয় মিটিং করে সামারি অ্যাপ্রুভ করলে পদগুলোর অন্যান্য কার্যক্রম সম্পন্ন হবে। এটি চলমান প্রক্রিয়া এবং সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।’
এনআইডির বিষয়টি সরকারি সিদ্ধান্ত জানিয়ে ইসি সচিব বলেন, ‘ইতোমধ্যে কমিশন তার বক্তব্য স্পষ্ট করেছে। সরকার যেটা বাস্তবায়ন করবে আমাদেরও সেটাই করতে হবে। অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারাও এর সঙ্গে একমত।’
দাবি না মানলে কালোব্যাজ ধারণসহ নানা কর্মসূচি দিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন। তাদের বেঁধে দেওয়া সময়ে দাবিগুলো পূরণ করা সম্ভব কি না- প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, ‘এটা যারা দাবি করেছে তারাই বলতে পারবে। আমি আগেই বলেছি এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া।
সচিব জাহাংগীর আলম বলেন, ‘আমার কাজই হচ্ছে তাদের যৌক্তিক বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট জায়গায় উপস্থাপন করা এবং বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা। সে ক্ষেত্রে তাদের জন্য আমার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’ কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন কমিশনের কর্মকান্ডে অচলাবস্থার সৃষ্টি হবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দেখা যাক কী হয়।