মিরাজুল কবীর টিটো : ১৯৭১ সালে শত্রুমুক্ত যশোরের প্রথম পত্রিকা স্ফূলিঙ্গের সম্পাদক ও প্রকাশক মিয়া আব্দুস সাত্তার ৮৫ বছর বয়সে না ফেরার দেশে চলে গেলেন। শুক্রবার সকাল ৭টায় উপশহর ১০ নম্বর সেক্টরের ভাড়া বাড়িতে তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি…রাজিউন)। প্রবীণ এই সাংবাদিক দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছিলেন। মিয়া সাত্তার ২ ছেলে ও ৪ মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
তাঁর মৃত্যুতে প্রেসক্লাব যশোর তিনদিনের শোক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে শুক্রবার সকালে ক্লাবে কালোপতাকা উত্তোলন ও সদস্যরা কালোব্যাজ ধারণ করেন। ২৫ ডিসেম্বর রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিলের মধ্যে দিয়ে শোক কর্মসূচি সমাপ্ত হবে।
মিয়া আব্দুস সাত্তার শুধু সাংবাদিকই ছিলেন না, ছিলেন একটি প্রতিষ্ঠান। তিনি স্থানীয় সংবাদপত্র জগতের পথপ্রদর্শক। যশোরসহ এ অঞ্চলে সাংবাদিক তৈরিতে তাঁর অবদান অবিস্মরণীয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত অনেক সাংবাদিকের হাতেখড়িই দৈনিক স্ফুলিঙ্গ থেকে।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মিয়া আব্দুস সাত্তারের সম্পাদনায় শত্রæমুক্ত যশোর থেকে ১৯৭১ এর ৯ ডিসেম্বর প্রথম প্রকাশিত হয় সাপ্তাহিক ‘স্ফুলিঙ্গ’। এটি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পত্রিকা। যশোর শত্রæ মুক্ত হওয়ার পর মাত্র ৪৮ ঘন্টার মধ্যে প্রকাশিত সাপ্তাহিক স্ফুলিঙ্গ ১৯৭৬ সালে দৈনিকে রূপ নেয়।
মিয়া আব্দুস সাত্তার ১৯৩৮ সালের ৪ এপ্রিল ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা উপজেলাধীন সোনাতুন্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মরহুম এসএম আদিল উদ্দিন এবং মা মরহুমা মাজিদুন নেছা। ৪ ভাইয়ের মধ্যে মিয়া আব্দুস সাত্তার ছোট। গ্রামের পাঠশালায় তার শিক্ষাজীবন শুরু। কর্মচঞ্চল এই মানুষটি শখের বশে জড়িয়ে পড়েন সাংবাদিকতায়। ১৯৫৮ সালে ফরিদপুর থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক জাগরণ পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। পেশাগত জীবনে তিনি ছিলেন দৈনিক সংবাদের ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি ও ইউপিপি’র ফরিদপুর সংবাদদাতা। যশোরের নওয়াপাড়া থেকে প্রকাশিত মাসিক মুকুল’র সম্পাদনা সহকারী হিসেবে মিয়া আব্দুস সাত্তারের যশোর আগমন। পরে আত্মীয়তার সূত্র ধরে যশোরের নতুন উপশহরে স্থায়ী বাসিন্দা হন। তিনি দৈনিক পয়গাম, ইস্টার্ণ নিউজ এজেন্সি (এনা) এর যশোর প্রতিনিধির দায়িত্বও পালন করেছেন। তিনি সাপ্তাহিক গণদাবীর বার্তা সম্পাদক ও সাপ্তাহিক ইশারার যুগ্ম সম্পাদক হিসেবেও কর্মরত ছিলেন। এর বাইরে মিয়া আব্দুস সাত্তার দৈনিক বঙ্গবার্তা, সাপ্তাহিক মুক্তি’র যশোর প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৭ সালে গ্রামের কাগজের যুগ পূর্তিতে তাকে গুণীজন সম্মাননা দেয়া হয়।
তার নেতৃত্বে দৈনিক স্ফুলিঙ্গ যশোরসহ আশপাশের অঞ্চলের সাংবাদিকতায় এক ভিন্নমাত্রা যোগ করে। যশোরের সংবাদপত্রের আজকের জয়যাত্রায় দৈনিক স্ফুলিঙ্গ এবং মিয়া আব্দুস সাত্তারের অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
এদিন জুম্মার নামাজের পর উপশহর মার্কাজ মসজিদে তার জানাজা হয়। এরপর তার মরদেহ প্রেসক্লাব যশোরে আনা হলে বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন তাকে ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানায়। পরে উপশহর গোরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়।
জানাজায় উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও উপশহর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এহসানুর রহমান লিটু, জেলা জাসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবুল কায়েস, প্রেসক্লাব যশোরের সহসভাপতি নুর ইসলাম, সাবেক সহসভাপতি আনোয়ারুল কবীর নান্টু, কোষাধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান রিপন, দৈনিক কল্যাণের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এহসান উদ দ্দৌলা মিথুন, উপশহর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী আজগার হোসেন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক আবু মুসা মধু প্রমুখ।
পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মিয়া আব্দুস সাত্তারকে শেষ শ্রদ্ধা জানান প্রেসক্লাব সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুনের নেতৃত্বে ক্লাবের নেতৃবৃন্দ, সভাপতি একরাম উদ দ্দৌলা ও সাধারণ সম্পাদক মবিনুল ইসলাম মবিনের নেতৃত্বে সংবাদপত্র পরিষদ, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আনোরুল কবীর নান্টুর নেতৃত্বে দৈনিক লোকসমাজ, সম্পাদক মবিনুল ইসলাম মবিনের নেতৃত্বে গ্রামের কাগজ, সম্পাদক একরাম উদ দ্দৌলার নেতৃত্বে দৈনিক কল্যাণ, বার্তা সম্পাদক মিজানুর রহমান মুনের নেতৃত্বে দৈনিক স্পন্দন, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আমিনুর রহমান মামুন ও বার্তা সম্পাদক হাবিবুর রহমান মিলনের নেতৃত্বে দৈনিক সমাজের কথা, দৈনিক সত্যপাঠ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক শাহাবুদ্দিন আলম, সভাপতি ফারাজী আহমেদ সাঈদ বুলবুল ও সাধারণ সম্পাদক এইচ আর তুহিনের নেতৃত্বে যশোর সাংবাদিক ইউনিয়ন, সভাপতি এম আইউব ও সাধারণ সম্পাদক আকরামুজ্জামানের নেতৃত্বে সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোর, সভাপতি মনিরুজ্জামান মুনির ও সাধারণ সম্পাদক নুর ইমাম বাবুলের নেতৃত্বে ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন। এছাড়াও যশোর জেলা সাংবাদিক ইউনিয়ন, জাগপা ও সাংস্কৃতিক সংগঠন অগ্নিবীনার পক্ষ থেকে তাকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।