স্টাফ রিপোর্টার ॥ গত বৃহস্পতিবার রাতে যশোর শহরের ষষ্ঠীতলায় সদ্য তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীর নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা ইয়াসিন আরাফাত সুমন (৪০) নামে এক ব্যক্তির বাড়ি ভাঙচুর ও তাকে মারধর করেছে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনের উপস্থিতিতে ও তার হুকুমে তাকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনা জানাজানি হওয়ায় শহরে ব্যাপক তোলপাড় হয়। জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ ওই নেতা অবশ্য এর সত্যতা কিছুটা স্বীকার করে বলেছেন, মেয়েটি শিশুসন্তান নিয়ে অসহায়ের মতো বাড়ির সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। ওই সন্তানকে ইয়াসিন আরাফাত সুমনের কাছে দিতে ‘ছেলেপিলে’ দরজার ছিটকানি ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে তাকে কয়েকটি চড়থাপ্পড় মেরেছিলো।
অপরদিকে কোতয়ালি থানা পুলিশের ওসি বলেছেন, যৌতুকের দাবিতে মারধর করায় ইয়াসিন আরাফাত সুমনকে তারা আটক করেছেন। তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছেন ওই নারী। ইয়াসিন আরাফাত সুমনও ওই নারীসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। যা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ইয়াসিন আরাফাত সুমনের পিতা সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম জানান, ছয় বছর আগে সদর উপজেলার পাঁচবাড়িয়া গ্রামের আবুল হোসেনের মেয়ে তহমিনা খাতুনের সাথে তার ছেলে সুমনের বিয়ে দেন। দাম্পত্য জীবনে তাদের মাগফুর সাদাত নামে ৪ বছর বয়সের একটি সন্তান রয়েছে। কিন্তু তার তহমিনার স্বভাব ভালো না। নানা অজুহাত তুলে তাদের সংসারে অশান্তি সৃষ্টি করতেন। তহমিনার নিয়মিত গঞ্জনা সইতে না পেরে বছর খানেক আগে সুমনের মা মারা যান। শুধু তাই নয়, তহমিনা তাদের সম্পত্তি তার নামে লিখে দেওয়ার জন্য সুমনের ওপর চাপ সৃষ্টি করতেন। ধারাবাহিক এই অত্যাচার নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পেতে গত ১৮ এপ্রিল সুমন তালাক দেন তহমিনাকে। তালাকনামা পেয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে তহমিনা জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনকে সাথে নিয়ে তাদের বাড়িতে চড়াও হন। সাথে কিছু খারাপ ছেলেপিলেও ছিলো। তারা ধাক্কা দিয়ে দরজার ছিটকানি ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে তার ছেলেকে মারধর করে। এরপর সেখানে পুলিশ আসে। তিনি অভিযোগ করেন, তার ছেলে সুমনকে মারধর করা হয়েছে। অথচ উল্টো তার ছেলেকে আটক করলো পুলিশ। তালাকপ্রাপ্ত তহমিনার কথামত পুলিশ তার ছেলের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ (সংশোধনী-২০০৩) এর ১১(গ)/৩০ ধারায় মামলাটি নিয়েছে। রাতে থানায় বসে পুলিশের ওপর প্রভাব খাটিয়ে মামলাটি রেকর্ড করিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন।
পুলিশ জানায়, যৌতুকের দাবিতে মারধর ও সহায়তার অভিযোগে ওই নারী আটক সুমন ও তার পিতা রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
হামলার শিকার ইয়াসির আরাফাত সুমন বলেন, পারিবারিক নানা সমস্যার কারণে গত ১৮ এপ্রিল তিনি তার স্ত্রী তহমিনাকে তালাক দিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে তার স্ত্রী আলাদা ঘরে থাকায় এবং বনিবনা না হওয়ায় তাকে তালাক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তালাকনামা হাতে পেয়ে তহমিনা ক্ষিপ্ত হয়ে অনেক লোকজন নিয়ে তার বাড়িতে হামলা করেন। তাকে ও তার বৃদ্ধ পিতাকে মারধর করেন হামলাকারীরা। তহমিনার সাথে ওই রাতে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনও ছিলেন।
তালাকপ্রাপ্ত তহমিনা বলেন, ডিভোর্স লেটার পেয়ে তিনি রাতে বাড়িতে গেলে তাকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। এসময় তার সম্পর্কে নানা জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এসে লোকজন দিয়ে দরজা খুলে দিয়েছেন।
জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, গ্রাম্য সম্পর্কে মেয়েটি তার নাতি। তহমিনা ইনস্টিটিউট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। তার স্বামী তাকে দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতন করে আসছেন। নির্যাতন সইতে না পেরে ৪ মাস আগে মেয়েটি বাপের বাড়িতে চলে যান। পরে ভালোভাবে সংসার করার কথা বলে সুমন তাকে ফিরিয়ে আনেন। এরপর ফের নির্যাতন শুরু করায় দুই মাস আগে মেয়েটি থানায় জিডি করতে গিয়েছিলেন। এছাড়া তার কাছে অভিযোগ করেন। এ সময় তিনি সুমনকে বকাঝকা দেন। তিনি বলেন, সুমন ও তহমিনা একই বাড়িতে বসবাস করলেও আলাদা থাকতেন। নির্যাতনের কারণে তহমিনা আলাদা ঘরে থাকতেন। বিষয়টি সমাধানের জন্য ঈদের পর বসার কথা ছিলো। কিন্তু এরই মধ্যে ১৮ এপ্রিল সুমন পাঁচবাড়িয়ার গ্রামের ঠিকানায় তহমিনাকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দেন। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে সন্তান নিয়ে বাইরে যান তহমিনা। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে দেখতে পান ঘরের দরজা জানালা বন্ধ। ডাকাডাকি সত্বেও সুমন ঘরের দরজা খুলে দিতে চায়নি। ফলে মেয়েটি সেই সন্ধ্যা থেকে শিশু সন্তানসহ বাড়ির সামনে অবস্থান করতে থাকেন। মশার কামড় খেতে থাকেন। পরে বিষয়টি তাকে জানানো হয়। রাত ১১ টার দিকে তিনি কয়েকজনকে সাথে নিয়ে সেখানে গিয়ে মেয়েটিকে অসহায়ের মত দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। সুমন তার শিশু সন্তানকেও নিতে চায়নি। এ কারণে তার সাথে থাকা লোকজন দরজায় ধাক্কাধাক্কি দিলে দরজার ছিটকানি ভেঙ্গে যায়। পরে সুমনকে দোতলা থেকে নামিয়ে এনে কয়েকটি চড়থাপ্পড় মেরেছে ছিলেপিলে।
সুমনের পিতা রবিউল ইসলাম অভিযোগ করেন, তার ছেলেকে মারধর করায় ওই রাতেই ৬ জনকে আসামি করে কোতয়ালি থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে পুলিশ গ্রহণ করেনি। যাদেরকে আসামি করা হয় তারা হলেন-তহমিনা, তার পিতা আবুল হোসেন, ভাই মনির হোসেন, বাবু, বোন আফিয়া খাতুন ও শহরের ঘোপ পিলু খান রোডের সৈয়দ আলী মোল্যার ছেলে শহিদুল ইসলাম মিলন।
কোতয়ালি থানা পুলিশের ওসি তাজুল ইসলাম বলেন, সুমনের দেয়া অভিযোগটি তারা গ্রহণ করেছেন। অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হব।
এদিকে আটক সুমনকে শুক্রবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।