তরিকুল ইসলাম, ঝিকরগাছা (যশোর) ॥ কাদাময় এক গ্রামের নাম আমিনি। গ্রামটি যশোরের নাভারণ ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত। গ্রামবাসীর অভিযোগ এ গ্রামের চলাচল ব্যবস্থায় উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি কখনও। গ্রামটিতে কোন পাকা রাস্তা নেই। এই বর্ষা মৌসুমে পুরো গ্রাম কাদামাটিতে একাকার। এতে যেমন বিদ্যালয়ে যেতে ভোগান্তিতে পড়ে শিক্ষার্থীরা, তেমনি উৎপাদিত কৃষি পণ্য বাজারে নিতে দুর্ভোগ পোহাতে হয় কৃষকের।
চলাচলের এমন দুর্ভোগে ক্ষোভে গ্রামের বিভিন্ন রাস্তায় ধানের চারা রোপণ করছেন গ্রামবাসী। এমন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল সোমবার সকালে স্থানীয় সংবাদকর্মীদের একটি দল ওই গ্রামে যায়। এ সময় স্থানীয় সংবাদকর্মীরা তাদের মোটরসাইকেল ও পায়ের জুতা আমিনি-রামচন্দ্রপুর দাখিল মাদ্রাসার সামনে রেখে গ্রামটি ঘুরে দেখেন।
প্রায় এক কিলোমিটার ঘুরে দেখা গেছে, আমিনি গ্রামের রেললাইন থেকে মাদ্রাসার সামনে ৩ থেকে ৪শ ফুট এক ইটের সোলিং ছাড়া ওই গ্রামে কোনও পাকা রাস্তা নেয়। বর্ষার মৌসুমে গ্রামের মানুষের চলাচলে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হয়। এছাড়া গ্রামে কোনও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় শিশুদের পাশের চান্দেরপোল অথবা কলাগাছি প্রায় ২ কিলোমিটার রাস্তা অসহনীয় কাদা পার হয়ে যেতে হয়। বৃষ্টি হলে অধিকাংশ শিক্ষার্থী স্কুলে যেতে পারেনা। এছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও একই অবস্থায় পড়তে হয়।
গ্রামে একটি দাখিল মাদ্রাসা, ২টি মসজিদ ও দুইটি মক্তব রয়েছে। রাস্তার কারণে বর্ষার মৌসুমে এসব প্রতিষ্ঠানে যাওয়া-আসা করাটাও কষ্টকর হয়ে ওঠে বলে গ্রামবাসী জানিয়েছেন। আমিনি গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত ফজের আলীর ছেলে আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন (৬৫) বলেন, আমার পিতা দেশের জন্য মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে এদেশ স্বাধীন করেছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বারবার সরকার পরিবর্তন হলেও আমিনি গ্রামে কোনও উন্নয়নের ছোঁয়া পড়েনি।
ওই গ্রামের মৃত-নুরুল ইসলামের ছেলো খাইরুল ইসলাম বলেন, আমিনি গ্রামে প্রায় একহাজার পরিবারে ৪ থেকে সাড়ে ৪হাজার মানুষের বসবাস। নাভারণ ইউনিয়নের মধ্যে তাদের গ্রামটি শতভাগ শিক্ষিত। দেশের বিভিন্ন বড় বড় প্রতিষ্ঠানে ওই গ্রামের মানুষ চাকরি করেন। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়াসহ কৃষকের মালামাল হাট বাজারে নেওয়া খুব কষ্টের ব্যাপার রাস্তার কারণে।
এছাড়া একই গ্রামের মৃত-ফজলে করিমের ছেলে মোহাম্মদ আলী (৭৫), রুহুল আমিনের ছেলে আবু দাউদ (৬০), রেজাউল করিমের ছেলে ইমন হোসেন (২৫) বলেন, বর্ষা মৌসুমে তারা ঠিকমত মসজিদে নামাজ আদায় করতে পর্যন্ত যেতে পারেন না। জনপ্রতিনিধিদের কাছে তাদের দাবি আমিনি গ্রামের ছোট ছোট কয়েকটি রাস্তা মিলে (প্রায় এক কিলোমিটার) পাকাকরণ হোক।
এ বিষয়ে নাভারণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহাজাহান আলী বলেন, আমিনি, রামচন্দ্রপুর ও গুননগর এই তিনটি গ্রাম নিয়ে ৬নং ওয়ার্ড। ইতোমধ্যে রামচন্দ্রপুর ও গুননগরে বেশ কাজ হয়েছে। আগামী অর্থবছরে এলজিএসপির মাধ্যমে আমিনি গ্রামে ইটের সোয়ালিংয়ের কাজ করা হবে বলে জানান তিনি।