বিশেষ প্রতিনিধি,
মাগুরা প্রেসক্লাবে অনিয়ম দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় গত শনিবার রাতে এক সাংবাদিকের উপর হামলা হয়েছে। এর প্রতিবাদে রবিবার দুপুরে মানববন্ধন করেছেন প্রায় ১শ বিক্ষুব্ধ সাংবাদিক। শহরের চৌরঙ্গী মোড় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন মাগুরা প্রেসক্লাবের মেয়াদউত্তীর্ণ কমিটি বাতিলেরসহ দুর্নীতি অনিয়মের তদন্তের দাবি তোলা হয়। পরে সাংবাদিক নির্যাতনের বিচার ও প্রেসক্লাবের অচলাবস্থা দূর করার দাবি জানিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন সাংবাদিকরা।একাত্তর টেলিভিশনের মাগুরা প্রতিনিধি সিনিয়র সাংবাদিক শরীফ তেহরান আলমের সভাপতিত্বে সাংবাদিকদের পাশাপাশি সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও মানববন্ধনে অংশ নেন। এসময় তাঁদের হাতে, ‘প্রেসক্লাবে সাংবাদিক নির্যাতনের বিচার চাই’, ‘সকল সাংবাদিকের প্রেসক্লাবে প্রবেশাধিকার দিতে হবে’, ‘প্রেসক্লাবের অবৈধ কমিটি বাতিল কর’, ‘প্রেসক্লাবের আয় ব্যায়ের হিসাব জানতে চাই’, প্রভৃতি লেখা ফেস্টুন প্লাকার্ড।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন এখন টিলিভিশনের নিজস্ব প্রতিবেদক রূপক আইচ, সময় টিভির রিপোর্টার শেখ ইলিয়াস মিথুন, মাগুরা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি এইচ এন কামরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক ইউনুস আলী, মাগুরা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আশরাফুল আলম সাগরসহ অন্যরা ।মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী মাগুরা প্রেসক্লাবের কার্যকরী কমিটির মেয়াদ দুই বছর। বর্তমানে প্রেসক্লাবে যে কমিটি বিদ্যমান রয়েছে সেটি গঠিত হয়েছিল ২০১৬ সালের ১৫ অক্টোবর। ১৮ সালে মেয়াদ উত্তীর্ণের পরও সাড়ে ৫ বছরের বেশি সময় ধরে এটি পরিচালিত হচ্ছে সভাপতি, সহ সভাপতির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ খালি রেখে। এই প্রেসক্লাবে প্রায় দুই দশক কোন নতুন সদস্য নেওয়া হয় না। দীর্ঘদিন এভাবে নিয়ম বহির্ভুতভাবে চলার কারণে চরম অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে প্রতিষ্ঠানটিতে । বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে পেশাদার সাংবাদিকরা প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে আসলেও কোন সাড়া মেলেনি। বক্তারা বলেন, সবশেষ গত শনিবার সন্ধ্যায় এ বিষয়ে আলোচনার জন্য প্রেসক্লাবে যান প্রায় ২০ জন সাংবাদিক। সেখান থেকে তাঁদেরকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা ও নানা রকম হুমকি দিলে সাংবাদিকদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা সৃষ্টি হয়। এসময় বাকবিতণ্ডার ভিডিও চিত্র ধারণ করার অভিযোগে এসএ টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি আব্দুল আজীজের উপর হামলা করে তাঁর মোবাইল ভেঙে ফেলেন রাশেদ খান নামে এক সাংবাদিক। রাশেদ খান নিজেকে প্রেসক্লাবের সদস্য এবং সাধারণ সম্পাদক শামীম খানের ভায়ের ছেলে বলে দাবি করেন। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এই ঘটনার ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।মানববন্ধনে সাংবাদিক শরীফ তেহরান আলম বলেন, সাংবাদিকরা মানুষের অধিকার নিয়ে লড়াই করেন। অথচ এখন এক সাংবাদিকের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়ে আরেক সাংবাদিকের রাস্তায় দাড়াতে হচ্ছে। আর জনগণের প্রতিষ্ঠান প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদেরই ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। বছরের পর বছর অবৈধভাবে দখল করে রাখা হয়েছে। তাহলে সাধারণ মানুষ কি করবে? কোথায় যাবে?’।মানববন্ধনে সাংবাদিকদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন জেলা ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আহাম্মদ আলী, শিক্ষাবিদ খান শফি উল্লাহ, বাংলাদেশ যাত্রা শিল্প উন্নয়ন পরিষদের সহ সভাপতি সুজয় সাহা, মাগুরা সঙ্গীত একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সহ অন্যারা।প্রেসক্লাবে সাংবাদিকের উপর হামলা ও চলমান অচলাবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শামীম খান রবিবার বিকেলে মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি এখন কোন বক্তব্য দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই। আমার আব্বা মৃত্যু শয্যায়’। এ বিষয়ে মাগুরা প্রেসক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটির আরও দুজন সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাঁরাও আনুষ্ঠানিক কোন বক্তব্য দিতে চান নি।মানববন্ধন শেষে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবু নাসের বেগ ও পুলিশ সুপার মোঃ মশিউদ্দৌলা রেজা।