• Wed. Dec 4th, 2024

Basic News24.com

আমরা সত্য প্রকাশে আপোষহীন

শস্ত্রবাহিনীকে সেনা ছাউনিতে ফিরিয়ে নিন

Bybasicnews

Aug 5, 2024

                  সংবাদ সম্মেলনে সাবেক সেনাকর্মকর্তারা

গতকাল রোববার (৪ আগস্ট) রাজধানীর মহাখালী ডিওএইচএসে রাওয়া ক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা তুলে ধরেন অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মকর্তারা। দেশের বিদ্যমান অবস্থায় সঙ্কট নিরসনে করণীয় প্রসঙ্গে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় সাবেক সামরিক কর্মকর্তাদের পক্ষে বিবৃতি পড়ে শোনান সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া। তবে অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্ন নেয়া হয়নি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক সেনাপ্রধান লে. জেনারেল নুর উদ্দিন খানসহ ৪৮ জন সাবেক সেনাকর্মকর্তা।

 

মূল বক্তব্য দেয়ার আগে জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া বলেন, আমি এখানে উপস্থিত সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ সিনিয়রের অনুমতিক্রমে সবার পক্ষ থেকে এই বিবৃতি পেশ করছি। তিনি বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরুটা দেশবাসী দেখেছেন। এর কোনো কিছুই মানুষের স্মৃতি থেকে মুছে যাওয়ার কথা নয়। প্রথমপক্ষ অর্থাৎ শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। সারা দেশের শিশু-কিশোর ও তরুণরা শত উসকানি, হামলা নির্যাতনের মধ্যেও ধৈর্য ধরে শৃখলার সাথে আস্তে আস্তে আইন মেনে সামনে পা বাড়াচ্ছিল। বিপরীতে দ্বিতীয়পক্ষ উপর্যুপরী উসকানি দিলো, গুণ্ডা-পাণ্ডা দিয়ে সন্ত্রাস চালাল এবং পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি নামিয়ে; আকাশে হেলিকপ্টার উড়িয়ে নির্বিচারে গুলি করে অগণিত শিশু, কিশোর, তরুণের তাজাপ্রাণ হরণ করল, তা দেশের মানুষ কি এত সহজে এবং অল্প সময়ে ভুলে যাবে?তিনি বলেন, আক্রমণকারীরা গণ-অভ্যুত্থানের প্রতিরোধের মধ্যে পিছু হটতে বাধ্য হলো। পরবর্তী পর্যায়ে ব্যবহার করা হলো দেশের সশস্ত্রবাহিনীকে। তাদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে কখনো সম্মুখভাবে, কখনো পেছনে, কখনো পাশে দাঁড় করিয়ে অন্য বাহিনীগুলো এ গণ-আন্দোলনের ওপর তাদের জুলুম-অত্যাচার, নির্যাতন অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। কোনোভাবে এমন পরিস্থিতির দায় দেশপ্রেমিক সশস্ত্রবাহিনীর নেয়া উচিত নয়।ইকবাল করিম ভূঁইয়া বলেন, দেশের নীতিনির্ধারকরা যদি বিবেক, বুদ্ধি ও হৃদয়হীন হয়ে না পড়তেন, তাহলে গত কয়েক সপ্তাহে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড়, করুণ, মর্মান্তিক এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলো ঘটত না। এসব হামলা, আক্রমণ ও পাল্টা প্রতিরোধে অঙ্গহানি ঘটেছে অগণিত মানুষের। অন্ধ হয়েছেন বহুসংখ্যক কিশোর ও তরুণ। অসহায় নাগরিকরা প্রয়োজনীয় ও জরুরি চিকিৎসাও পাচ্ছেন না। তার ওপরে চলছে ব্লক রেইড। সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে বাড়িঘর, মেস চিনিয়ে ধরে নিয়ে যাওয়ার মতো ভয়ঙ্কর ঘটনাও চলছে। মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন অথবা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন হাজার হাজার নিরপরাধ কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতি।

 

 

সাবেক এ সেনাপ্রধান বলেন, সুস্থ মস্তিষ্কের কোনো বিবেকবান মানুষের পক্ষে দেশের এমন পরিস্থিতি মেনে নেয়া সম্ভব নয়। আমরা নিজেরা নিজেদের সাথে যুদ্ধ করতে পারি না। সমগ্র দেশটা, প্রিয় রাজধানী ঢাকা এবং দেশের বিভিন্ন জেলা শহরগুলোকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করতে দিতে পারি না। আজ এখানে দাঁড়িয়ে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলছি, তা আমরা করতে দেবো না। সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে সাথে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট থাকব।লিখিত বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী অতীতে কখনো দেশবাসী বা জনসাধারণের মুখোমুখি দাঁড়ায়নি। তাদের বুকে বন্দুক তাক করেনি। একটি রাজনৈতিক সঙ্কটকে সামরিক রূপায়নের যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, আমরা সশস্ত্রবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এর তীব্র বিরোধিতা করছি। পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারে সামরিক সরকারের এমন অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত সম্পদশালী দেশটিকে ধ্বংসের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। শাসকদের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তকে আন্তর্জাতিক আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হচ্ছে।ইকবাল করিম ভূঁইয়া বলেন, উদ্ভূত এ রাজনৈতিক সঙ্কটকালে আমরা রাজপথ থেকে সশস্ত্রবাহিনীকে সেনা ছাউনিতে ফিরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আমাদের সীমান্ত এ মুহূর্তে অরক্ষিত। ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলন দমনে সীমান্ত থেকে উল্লেখযোগ্য বিজিবি সদস্যদের প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ থেকে উত্তরণের জন্য সশস্ত্র বাহিনীকে অবিলম্বে সেনা ছাউনিতে ফিরিয়ে এনে আপদকালীন সঙ্কট মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।সাবেক এ সেনাপ্রধান বলেন, ‘বৈষম্য, ভেদাভেদ ও জুলুমের অবসান করা ছিল মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার। তা না ঘটে উল্টো এটা আজ দেশের সব পর্যায়ে ভয়াবহভাবে বিস্তার লাভ করেছে। সমাজের নিচের স্তরে পড়ে থাকা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সহ্যের সীমার বাইরে চলে গেছে। আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ও এর ব্যবস্থাপনা খুব নাজুক, যার প্রতিকার ঘটাতে জনগণ আজ আত্মোৎসর্গ করতে পিছপা হচ্ছে না। এমন কষ্টকর পরিস্থিতির ভেতর দেশবাসীকে ঠেলে দেয়ার জন্য যারা দায়ী, বিচারের মাধ্যমে তাদের সাজা নিশ্চিত করে পুরো ব্যবস্থার মধ্যে স্বচ্ছতা, ন্যায্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা প্রতিষ্ঠা করা না গেলে সমাজে শান্তি, শৃঙ্খলা ও আস্থা ফিরিয়ে আনা যাবে না।’

 

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সংঘটিত সব হত্যাকাণ্ড, জখম, গুলি, হামলা, ভাঙচুর, সন্ত্রাসের ঘটনার স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য তদন্ত হতে হবে জাতিসঙ্ঘের নেতৃত্বে এবং তাদের অধীনে। আমরা সবাই বাংলাদেশের মানুষকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করি এবং ভালোবাসি। সশস্ত্রবাহিনীতে কর্মরত সব সদস্য সার্বভৌমত্ব রক্ষার শপথ ও সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের প্রস্তুতি নিয়েই এই পেশায় নিয়োজিত আছেন। আজ দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে আমাদের সব সহকর্মীকে বিনীতভাবে অনুরোধ করব, সৈনিকের পেশার সর্বোচ্চ মর্যাদা, মানবিকতা ও নৈতিক মানদণ্ড বজায় রেখে দায়িত্ব পালন করবেন।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের সশস্ত্রবাহিনী গত তিন দশকের বেশি সময় অক্লান্ত পরিশ্রম ও ত্যাগের মাধ্যমে যে সম্মান, মর্যাদা ও গৌরব অর্জন করেছে, তা আজ কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়েছে। সার্বজনীন মানবাধিকারের সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক মান রক্ষা করেই আপনাদের সবাইকে নিজ দেশের জনগণের পক্ষে দাঁড়াতে হবে। চোখের সামনে আমরা নিজেদের মাতৃভূমিকে ধ্বংস হতে দিতে পারি না। দেশমাতৃকার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার এই মহান ব্রত পালনে আল্লাহ নিশ্চয়ই আমাদের সবার সহায় হবেন। ইনশাআল্লাহ তিনি নিশ্চয়ই আমাদের হেফাজত করবেন।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে বক্তব্য দেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও সেনাকর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) এম সাখাওয়াত হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) শাহেদুল আনাম খানসহ ছয়জন সাবেক জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা। এ সময় অন্যদের আরো উপস্থিত ছিলেন সাবেক সেনাপ্রধান লে. জেনারেল (অব:) নুরুদ্দীন খান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *