মাগুরা জেলা প্রতিনিধি : মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার কাদিরপাড়া ইউনিয়নের দোরাননগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৮২ জন শিক্ষার্থী নিয়ে চলছে বিদ্যালয়ের পাঠদান। গত বৃহস্পতিবার ৭ নভেম্বর দুপুর ১২ টার সময় তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেনী পর্যন্ত পাঠদান কার্যক্রম সময় চলাকালে বিদ্যালয়ে এসকল শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক ও কর্মচারির সংখ্যা রয়েছে ১৫ জন। যার মধ্যে শিক্ষক ৯ জন ও কর্মচারী রয়েছে ৬ জন। প্রতিষ্ঠানটি ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় পরে ১৯৮৫ সালে এমপিওভুক্ত হয়। স্থানীয়রা ও অভিভাবকরা অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ অধিকাংশ শিক্ষকই স্থানীয় সামাজিক রাজনীতি ও বিভিন্ন অপরাধ মূলক ঝামেলার সঙ্গে জড়িত। এর আগে বিদ্যালয়ে কর্মচারি নিয়োগে ৩৬ লাখ টাকা নিয়োগ বানিজ্য হয়েছে বলে শুনা গেছে। যার কারণে যার কারণে ওই এলাকার একাংশের লোকেরা তাদের সন্তানদের এই স্কুলে ভর্তি করাতে চায় না। আবার যারা ভর্তি হয় তাদের উপস্থিতির সংখ্যাটাও কম থাকে। শিক্ষকরা স্থানীয় সমস্যা সমাধান করে ছেলেমেয়েদের স্কুলমুখী করার দাবি জানান। পাশাপাশি শিক্ষকদের গাফিলতিকে দায়ি করছেন অনেকেই। প্রতিষ্ঠানটিতে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ১১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫ জন ছাত্রী ও ৬ জন ছাত্র। সপ্তম শ্রেণিতে ১৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫ জন ছাত্রী ও ৯ জন ছাত্র। অষ্টম শ্রেণিতে ৩৭ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৯ জন ছাত্রী ও ১৮ জন ছাত্র। নবম শ্রেণিতে ৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩ জন ছাত্রী ও ৬ জন ছাত্র এবং দশম শ্রেণিতে ১১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪ জন ছাত্রী ও ৭ জন ছাত্র রয়েছে। প্রতিটি শ্রেণিতে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই অনুপস্থিত থাকে। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে এক জন প্রধান শিক্ষক ও এক জন সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ সাত জন সহকারী শিক্ষক এবং ছয় জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী রয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে, বিদ্যালয়ের কার্যক্রম ও পাঠদান যথা সময়ে হয় না। প্রায় দিনই নির্দিষ্ট সময়ের আগেই স্কুল ছুটি হয়ে যায়। শিক্ষকরাই ঠিকমতো স্কুলে আসে না। স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত অধিকাংশ শিক্ষক ও কর্মচারি। যার কারণে অধিকাংশ অভিভাবকরা তাদের ছেলেমেয়েদেরকে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে দোরাননগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিরাপদ বারুরী জানান, বিদ্যালয় টেস্ট পরীক্ষা চলছে এ কারণে পরীক্ষা শেষে ছুটি দেওয়া হয়েছে। এক সময় বাইরের গ্রামের শিক্ষার্থীরা আমাদের এখানে ভর্তি হত। আশেপাশে বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হওয়ায় আমাদের এখানে শিক্ষার্থী কমে গেছে। তবে স্থানীয় রাজনৈতিক ঝামেলার কথা স্বীকার করে বলেন প্রধান শিক্ষক পদে তার নিয়োগের পর থেকেই একটি কুচক্রী মহল বিরোধীতা করে গ্রামের ছেলেমেয়েদেরকে অন্য স্কুলে নিয়ে ভর্তি করাচ্ছে। তবে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি ছেলেমেয়েদের স্কুলমুখী করার। স্থানীয়দের দাবি, এভাবে একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না। শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিনে দিনে কমে যাচ্ছে। কিন্তু শিক্ষক এবং কর্মচারা ঠিকই সরকারি টাকা বেতন উঠাই নিচ্ছেন। বছরের পর বছর কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই চলছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। ৬ নং কাদিরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আইয়ুব হোসেন খান জানান, দোরাননগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে ২ টা গ্রুপের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে আজ ছাত্র-ছাত্রী কমে গেছে। আর স্কুলের ৩৬ লাখ টাকা নিয়োগ বাণিজ্য হয়েছে বলে লোকমুখে শুনেছি। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুল গণি জানান, এমপিওভূক্তির আগে বিষয়গুলো দেখা হয়। কিন্তু পরে আর কিছুই করার থাকে না। আমরা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রী বাড়ানোর বিষয় কথা বলতে পারি। এবিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হবে এবং সমস্যা সমাধানে আলোচনার বিষয় রয়েছে। শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাখী ব্যাণার্জী বলেন, দোরাননগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিষয়টি নিয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হবে।