মাগুরা প্রতিনিধি : মাগুরা শালিখা উপজেলার আড়পাড়া সরকারি খাদ্য গুদাম থেকে আত্মসাৎ কৃত ১৯০ মেট্রিকটন চাউল ও ৭ হাজার বস্তা গায়েবের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য অনুসন্ধানে দেখা যায় আড়পাড়া চাল গায়েবের বিষয়টি দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসছে। মাগুরা জেলার বর্তমান খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনোতোষ কুমার মজুমদার ১৯ জুন ২০২২ তারিখে মাগুরা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হয়ে দায়িত্ব পান। তিনি গত জুলাই মাসে আড়পাড়া খাদ্য গুদাম পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন কালে গুদাম ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুল ইসলামের অদক্ষতা ও অব্যবস্থাপনার বিষয়ে পরিলক্ষিত হলে তাকে বদলীর জন্য ১০ আগস্টে দ্রুত বদলীর জন্য আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কাছে পত্র প্রেরণ করেন। এছাড়া তিনি নিয়মিত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বিভিন্ন সময়ে সর্তক ও কৈফিয়ত তলব করেন। আড়পাড়া খাদ্য গুদাম থেকে চলাচল সূচির মাধ্যমে খুলনা মহেশ্বরপাশা সিএসডি তে ৩০০ মেট্রিক টন চালের প্রোগ্রাম হয়। উক্ত চালের মধ্যে ২৩৩.৪০০ মেট্রিক টন চাল মহেশ্বরপাশা খুলনা সিএসডি তে প্রেরণ করা হয়। তন্মধ্যে ৪৫.৮৭০ মেট্রিক টন চালের মান খারাপ হয় ফলে উক্ত চাল আড়পাড়া খাদ্য গুদামে ফেরত আসে। উক্ত চাল বর্তমান জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের যোগদানের পূর্বেই সংগৃহীত। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক যোগদানের পর বিষয়টি জানার সাথে সাথেই ২৬ জুলাই ১৪৯ নং স্মারকে ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে। কমিটি ২৮ জুলাই তাদের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার সাথে সাথেই শালিখা ভারপ্রাপ্ত গুদাম কর্মকর্তা শফিউল ও শালিখা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সালমা চৌধুরীকে ব্যাখ্যা তলব করেন। এবিষয়ে ১৭ আগস্টে ২১৮১ নং স্মারকে আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক সেলিম উল আজম শফিউল আলমকে এবং ২১৮২ নং স্মারকে সালমা চৌধুরীকে কৈফিয়ত তলব করেন। পরবর্তীতে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবার ২১ আগস্টে ২১৫ নং স্মারকে ওসিএলএসডি শফিককে বদলী করার জন্য আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কাছে পত্র প্রেরণ করেন। এছাড়া ২৭ নভেম্বরে জেলা আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক খুলনা বিভাগ খুলনা মহোদয় কর্তৃক আড়পাড়া এলএসডি পরিদর্শন কালে মাগুরা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বিষয়টি মহোদয়কে অবহিত করলে তিনি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে মজুদকৃত খাদ্য শস্যের সঠিক পরিমাণ যাচাই-বাছাইয়ের জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করেন।কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বিলম্বিত হওয়ায় তিনি কমিটিকে দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত গুদাম কর্মকর্তা শফিকের অসহযোগিতা কারণে বিলম্বিত হচ্ছে মর্মে তদন্ত তদন্ত কমিটির আহবায়ক এবিষয়ে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে জানান। পরবর্তীতে তদন্ত কমিটি খামাল ভেঙ্গে তাদের কার্যক্রম শুরু করেন। তবে ইতিমধ্যে ৩০ নভেম্বরে ৪৭৮ নং স্মারকে এবং ৮ ডিসেম্বরে ৫০৪ নং স্মারকে শফিককে আড়পাড়া খাদ্য গুদাম থেকে দ্রুত বদলীর জন্য পত্র প্রেরণ করেন। সেই প্রেক্ষিতে আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক ৮ ডিসেম্বরে ৩১৫৫ নং স্মারকে তাকে আড়পাড়া খাদ্য গুদাম হতে প্রত্যাহার করে সদর খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা নুরে আলম সিদ্দিককে অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করে। নুরে আলম সিদ্দিক ১০০% ওজনে দায়িত্ব গ্রহণের জন্য পত্র দিলে ইতিপূর্বে গঠিত কমিটিকে আড়পাড়া খাদ্য গুদামের মজুদ শস্য ও অন্যান্য মালামাল ১০০% যাচাই-বাছাই করে নুরে আলম সিদ্দিকির নিকট বুঝে দেওয়ার জন্য কমিটিকে নির্দেশ প্রদান করা হয়। তবে অনুসন্ধান করে দেখা যায় গত ৩০ নভেম্বরে আড়পাড়া খাদ্য গুদামে মজুদ ১০০% সঠিক আছে মর্মে শালিখা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সালমা চৌধুরী সরেজমিনে বাস্তব মজুদ যাচাই-বাছাই প্রতিবেদন দাখিল করেন। বাস্তব যাচাই-বাছাই প্রতিবেদনে কোন ঘাটতি নাই এবং ১০০% মালামাল ঠিক আছে মর্মে প্রতিবেদন দেন। পরবর্তীতে ডিসেম্বর মাসের ১ম পক্ষের ১৫ ডিসেম্বরে প্রতিবেদন দেওয়ার বিধান থাকলেও তিনি ১৮ ডিসেম্বরে প্রতিবেদন প্রস্তুত করে ২২ ডিসেম্বরে দাখিল করেন এবং সেখানে তিনি বিভিন্ন গুদামের বিভিন্ন খামালে ঘাটতি আছে বলে অভিযোগ করেন। উক্ত প্রতিবেদন প্রাপ্তির সাথে সাথেই তাকে ২২ ডিসেম্বরে ৫১২ নং স্মারকে গুদামের মালের ঘাটতি সংঘটিত হওয়ার সাথে সাথেই তাৎক্ষণিক ভাবে স্থানীয় শালিখা থানায় এজাহার দায়ের করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়। তদন্ত কমিটির কার্যক্রম চলাকালের সময়ে ৫ টি খামালে প্রায় ২৫ মেট্রিক টন এবং আরও ২ টি খামালে প্রায় ১০৫ মেট্রিক টন মোট অনুমান ১৩০ মেট্রিক টন মতো চাল ঘাটতি দেখা যাওয়া মাত্রই বিষয়টি মাগুরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবু নাসের বেগ কে জানালে তিনি সঙ্গে সঙ্গে গুদাম সিলগালা করার জন্য শালিকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইয়াসমিন মনিরা ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনোতোষ কুমার মজুমদার কে আদেশ প্রদান করেন। মাগুরা জেলা প্রশাসকের আদেশ ক্রমে উক্ত ২ জন যৌথভাবে ৪ টি খাদ্য গুদাম সিলগালা করেন এবং শফিককে আইনের হাতে তুলে দেন। পরবর্তীতে তদন্ত কমিটি নতুন কমিটি গঠন করে যাচাই-বাছাই শুরু করে ৬ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে তদন্ত শেষ করে কিন্তু সেটার পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল হয়নি। স্থানীয় খাদ্য গুদামের কর্মচারী এবং উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায় প্রত্যক্ষ কর্মকর্তা হিসেবে শালিখা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে স্বশরীরে গুদামে উপস্থিত হয়ে প্রতিটি খামাল যাচাই-বাছাই করে ঠিক আছে কিনা মর্মে প্রতিবেদন দাখিল করার বাধ্যবাধকতা আছে। কিন্তু এই কাজটি সালমা চৌধুরী নিজস্ব অফিসে বসে ভারপ্রাপ্ত গুদাম কর্মকর্তা শফিকের প্রস্তুতকৃত প্রতিবেদনে সাক্ষর করে দিতেন প্রতিবেদন অনুযায়ী। যেটা কোনভাবেই সঠিক বৈধ কাজ নয় যা বাংলাদেশ খাদ্য নিয়ন্ত্রণ আইনের বিরোধী পরিপন্থী। তবে গুদামে কোন মাল ঢুকলে বা সংগ্রহ হলে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে প্রত্যক্ষ ভাবে খামালে মাল উঠছে কিনা, ওজন ঠিক আছে কিনা তার শতভাগ নিশ্চিত হয়ে সরকারি টাকা বা বিল প্রদান করার বিধান রয়েছে। সংগ্রহীত খাদ্য শস্যের পরিমাণের মালের তারতম্যর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও ভারপ্রাপ্ত গুদাম কর্মকর্তা কোনভাবেই তাদের গাফিলতির দায় এড়াতে পারে না। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনোতোষ কুমার মজুমদারের যোগদানের ৫ মাসের একটু বেশি সময়ের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত গুদাম কর্মকর্তাকে বদলীর জন্য কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেন এবং ৫ মাসে ৪ বার আড়পাড়া খাদ্য গুদাম পরিদর্শন করেন। এবিষয়ে বিভিন্ন খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনোতোষ কুমার মজুমদারের কার্যক্রম যথাযথ সঠিক ছিলো। তাছাড়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে জড়িয়ে তার পূর্বের বিভিন্ন কর্মস্থল সম্পর্কে নেতিবাচক খবর প্রকাশিত হয়েছে তা তদন্ত করে তার সঠিকতা পাওয়া যায়। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায় একটা কুচক্রী মহল তার ভাবমূর্তি এবং সততাকে ক্ষুণ করার জন্য স্বার্থে এবং অহেতুক হয়রানির লক্ষ্যে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এবিষয়ে মাগুরা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনোতোষ কুমার মজুমদার প্রতিবেদককে জানান এবিষয়ে আমি দোষী বা নির্দোষী এটা চুড়ান্ত তদন্ত রিপোর্ট হলে জানতে পারবেন। আর একজন সম্মানিত মন্ত্রী নিয়ে আমাকে জড়িয়ে স্বজন প্রীতির সম্পর্ক এটা মোটেই সঠিক কথা বা তথ্য নয় আর আমি কখনও চাকরির বদলী বাণিজ্যর সাথে জড়িত নয়। কারণ সরকারি চাকরির স্থানে আমার কাছে সরকারি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন মুখ্য ও প্রধান কাজ।