মাগুরা জেলা প্রতিনিধি। দেশে যখন তোলপাড় শুরু হলো মেঝে ভাই হাবিবুর রহমান যশোরে পুলিশে চাকুরী করে,ভাইয়ে কোন বিপদ হয় কিনা তাই তার পাশে দাঁড়াতে ছুটে যান যশোর পুলিশ লাইলে।সেখানে যেয়ে পড়তে হয় পাকিস্তানী মিলিটারির আক্রমণের মুখে,অনেকে লোক শহীদ হলেও প্রাণে বেঁচে যান দুই ভাই।সেখান থেকে এপ্রিলের প্রথম দিকে দুই ভাই একটি অস্ত্র নিয়ে ২০/২৫ জন দল বেঁধে মাগুরার উদ্দেশ্য রওনা দেন।সীমাখালী নামক স্থানে পৌছালে আবারও বাঁধার সম্মুখীন হন রাজাকার ও পাকিস্তানি মিলিটারী বাহিনীর,আগে থেকে বিপদ আঁচ করতে পেরে দেবদারু গাছে অস্ত্র লুকিয়ে ফেলেন,সাথে থাকা লোকজনের সাথেও তারা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শীকার হন,সেখান থেকে এক পুলিশের সহযোগিতায় ছাড়া পেয়ে চলে আসেন গ্রামের বাড়ী মহম্মদপুর উপজেলার বাবুখালীর চূড়ারগাতিতে।ভাইকে বাড়ীতে রেখে দেশের ঐ বিপদের মুহুর্তে নিজেকে গুটিয়ে রাখতে না পেরে দেশ মাতাকে রক্ষা করতে যোগ দেন মুক্তি যুদ্ধে।বাড়ী থেকে চলে যান ভারতের রানাখাটে সেখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে যোগ দেন আকবর বাহিনীর সাথে।ফরিদপুর হয়ে কামারখালী ঘাট হয়ে মাগুরার ঢুকবে মিলিটারি এমন খবরে ছুটে যান সেখানে,ফরিদপুর প্রান্তে নদীর ঐ কুলে পড়ে আছে কয়েকটি নৌকা, এপার থেকে কয়েকজন ছুটে যায় ওপারের নৌকা আনতে,যাতে সেই নৌকায় মিলিটারীরা পার হয়ে এপারে(মাগুরা)ঢুকতে না পারে। ওপার থেকে নৌকা নিয়ে অনেকে মাঝ নদী পর্যন্ত চলে এলেও ছোট নজরুলের নৌকা ছাড়াতে একটু দেরী এবং ছোট মানুষ হওয়ায় তিনি রয়ে যান ওপারেই, এর মধ্যে মিলিটারিরা ঘাটে এসে হাজির,তিনি তাদের উপস্থিতি দেখে এপারের উদ্দেশ্যে নৌকা ছেড়ে দেন,মিলিটারিরা তাদের পার করার জন্য ডাকতে থাকলেও তাতে কোন কর্ণপাত না করে ছেড়ে দেন নৌকা, এপারে নৌকাটি নিয়ে আসার জন্য দ্রুত বাইতে থাকেন,ছোট মানুষ ভেবেই হয়তো গুলি করেনি তারা তাই সে যাত্রায় বেঁচে যান তিনি।এর পর একদিন শ্রীপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে সকলে অবস্থান করছিলো,খবর এলো এখানে মিলিটারীরা তাদের এখানে অবস্থানের কথা জেনে গেছে, কিছু ক্ষনের মধ্যেই সেখানে আক্রমণ করবে।তাই সকলকে দ্রুত এই স্থান ত্যাগ করতে হবে,সেখান থেকে সকলে অন্যত্র যাওয়ার জন্য রওনা দিয়ে পথিমধ্যে তাদের মনে পড়লো কিছু রসদ তারা সেখানে ভুলে রেখে চলে এসেছে।সবাই সিদ্ধান্ত নিলেন ছোট নজরুলকে সেখানে পাঠাতে হবে,সকলের কথা মত তিনি সেখানে গেলেন, রসদ গুলো খুঁজে পেয়েছেনও কিন্ত ততক্ষণে মিলিটারি সেখানে হাজির। জীবনের মায়া না করে নিজেকে কিছুটা আঁড়াল করে সেখান থেকে রওনা দিয়ে চলে আসেন।এছাড়াও শ্রীপুরে,মহম্মদপুরের খালিয়া ও বিনোদনপুর যুদ্ধও অংশ নিয়েছেন তিনি।তাই তার স্বীকৃতিস্বরূপ আকবর বাহিনীর প্রধান অধিনায়ক আকবর হোসেন মিয়া দিয়েছেন তিনাকে মুক্তিযুদ্ধার সনদ পত্র। রয়েছে মেজর জলিলের দেওয়া সার্টিফিকেট, পেয়েছেন যুদ্ধকালীন কমান্ডার সৈয়দ মারুফ আহম্মদ মাক্ষু ভাইয়ের প্রত্যয়ন।নাম রয়েছে ২০১১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ হতে প্রাপ্ত দাবিদার মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় ৫৭ নং সিরিয়ালে।যাদের সাথে সহযোদ্ধা হয়ে যুদ্ধ করেছেন মোহাম্মদ আখতার হোসেন লস্কর ইউনিয়ন কমান্ডার বাবুখালী, মোঃসাইফুল রহমান(খালিয়া)সৈয়দ মারুফ আহম্মদ (মাঝাইল,শ্রীপুর)সহ অনেকেই দিয়েছেন স্বাক্ষ এত কিছুর পরও ২০১১সালে দাবিদার তালিকায় নাম ছাড়া আর কিছু তিনি দেখে যেতে পারেননি।১৯৫৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারীতে জন্ম নেওয়া কাজী নজরুল ইসলাম (শরিফুল) ২০১৩ সালের ১১ জানুয়ারী সকল কিছুর মায়া ত্যাগ করে,মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতিটুকু না পাওয়ার কষ্ট বুকে নিয়ে, যে দেশকে তিনি শত্রুমুক্ত করেছেন,সেই দেশ রেখে ওপারে পাড়ি জমিয়েছেন তিনি।সহধর্মিণী নার্গিস পারভীন বলেন,আমরা সরকারের কাছে কোনো ভাতা বা অর্থিক সুবিধা চাই না,আমি শুধু চাই আমার স্বামী যে দেশের জন্য নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে,জীবনকে বাঁজি রেখে যুদ্ধ করলো সেই দেশ শুধু তার স্বীকৃতিটুকু দিক,তিনি(স্বামী)বেঁচে থেকে সেটা দেখে না যেতে পারলেও তার আত্মাটা তো অন্ততঃ শান্তি পাবে যে,যে দেশকে তিনি শত্রু মুক্ত করতে যুদ্ধ করেছেন,সে দেশ তাকে স্বীকৃতি দিয়েছেন,তাই আমি প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রীর কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি আমার স্বামী যাতে স্বীকৃতিটুকু পান তিনি যেন সে ব্যবস্থাটুকু করে দেন।এবিষয়ে মহম্মদপুর উপজেলার সাবেক ডেপুটি কমান্ডার ও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব মোহাম্মদ আব্দুল হাই বলেন,কাজী নজরুল ইসলাম (শরিফুল) যাতে মুক্তি যোদ্ধার স্বীকৃতি পায় সে বিষয়ে আমি আমার স্থান থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা ও চেষ্টা করবো।