ক্রীড়া প্রতিবেদক: আজ রোববার থেকে শুরু হচ্ছে বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ আসর বিশ্বকাপ। কাতারের আল-খোরের আল-বায়াত স্টেডিয়ামে উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হবে গ্রুপ-এ’র দুই দল ইকুয়েডর ও স্বাগতিক কাতার। বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় শুরু হবে ম্যাচটি। এর মাধ্যমে শুরু হয়ে যাবে মাসব্যপী বিশ্বকাপের জমজমাট লড়াই। টানটান উত্তেজনায় সারা বিশ্ব অপেক্ষমাণ। এমনিতেই মেগা ইভেন্ট নিয়ে বিশ্বব্যাপী আগ্রহের কমতি থাকে না। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে আজ ২০ নভেম্বর থেকে শুরু হতে যাচ্ছে গ্রেটেস্ট শো অন দ্যা আর্থের ২২ তম সংস্করণ, যেখানে মরুর বুকে শুরু হবে বিশ্বফুটবলের দুর্দান্ত ঝড়। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কী কী থাকছে ঃ এবারের বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকছে বৈচিত্র্য। পেট্রো ডলারের ঝনঝনানিতে বিশ্বের অন্যতম ধনী রাষ্ট্র কাতার, ব্যাপকতা আর জাঁকজমকতায় কার্পণ্য রাখছে না মোটেও। সুরের মূর্ছনায় হারিয়ে যাবেন ৬০ হাজার দর্শক। শাকিরা ও কিজ ড্যানিয়েলের ব্যাপারে রহস্য থাকলেও স্থানীয় শিল্পীদের পাশাপাশি পারফর্ম করবে কোরিয়ান ব্যান্ড বিটিএস। থিম সং গাইবেন লিও বেবি। তার সঙ্গে নাচবেন মানাল, রেহমা আর নোরা ফাতেহি। থাকছে জমকালো আতশবাজির ঝলকানি। স্বপ্নের আল বায়াত স্টেডিয়ামে হবে স্বপ্নযাত্রার সূচনা। বাংলাদেশ সময় রোববার (২০ নভেম্বর) রাত ৮টা। হয়তো থেমে যাবে সব ব্যস্ততা। চোখ জোড়া লেপ্টে যাবে ওই টিভি সেটের সামনে। কাতার মহাযজ্ঞের শুরুটা হবে যেখানে। কৌতূহলের তুঙ্গে তাই কী থাকবে বিশ্বকাপের উদ্বোধনীতে। কাতারের ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে থাকবে বিশেষ প্রদর্শনী। উঠে আসবে মরুর বুকে কীভাবে ফুটল ফুল। বিশাল সব ইমারতের পেছনের গল্প। বিশ্বকাপের ইতিহাসও পাবে প্রাধান্য। এরপর সুরের মূর্ছনায় হারিয়ে যাওয়ার পালা। ২২তম আসরের অফিসিয়াল থিম সং ‘দ্য ওয়ার্ল্ড ইজ ইওরস টু টেক’ গাইবেন লিও বেবি। তার সঙ্গে বিশেষ পারফর্ম করবেন বলিউড হার্ডথ্রুব নোরা ফাতেহি। নোরার সঙ্গে থাকবেন মানাল ও রেহমা। জোর গুঞ্জন আছে গাইবেন শাকিরা আর কিজ ড্যানিয়েলও। কিন্তু বিষয়টি এখন পর্যন্ত রহস্যই রেখে দিয়েছেন আয়োজকরা। তবে কোরিয়ার বিখ্যাত ব্যান্ড বিটিএসের গান, তৈরি করবে ভিন্ন আবহ। যেখানে চমক বিটিএসের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য জাংকুক। যিনি অংশ হতে যাচ্ছেন এই সাউন্ডট্র্যাকের। এছাড়াও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেখা যেতে পারে পপ গায়িকা দুয়া লিপা, ব্ল্যাক আইড পিস, জে বালভিন ও নাইজেরিয়ার সংগীতশিল্পী প্যাট্রিক নায়েমেকা ওকোরিকে। স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনাও পাবে বিশেষ স্থান। উদ্বোধন অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে প্রদর্শন করা হবে বিশ্বকাপের অফিশিয়াল মাসকট লা’ইব। আরবি যার অর্থ অতি দক্ষ খেলোয়াড়। এরপর শুরু হবে আতশবাজির ঝলকানি। আর এরমধ্যেই শেষ হবে জমকালো আয়োজন। স্টেডিয়ামে সরাসরি যা উপভোগ করবেন ৬০ হাজার দর্শক। এরপরই ইকুয়েডের-কাতার ম্যাচের রোমাঞ্চ।
এদিকে, নানা কারণে কাতার বিশ্বকাপ আলোচিত হচ্ছে। বৈশ্বিক মহামারি পেরিয়ে বিশ্ব আবার দেখবে ফুটবল উন্মাদনা। তাছাড়া কাতার বিশ্বকাপের মাধ্যমে দ্বিতীয়বারের মতো এশিয়া মহাদেশে বসতে যাচ্ছে ফুটবলের এই বিশ্ব আসর। ২০ বছর আগে জাপান -কোরিয়ার যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়েছিলো ফুটবল বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো শীতকালে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এই মেগা ইভেন্ট। সাধারণত মে – জুলাই মাসের মধ্যে আয়োজন করা হয় বিশ্বকাপ। কিন্তু সেইসময় কাতারে অস্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকায় তা নভেম্বর ডিসেম্বর মাসে সরিয়ে আনা হয়। জনসংখ্যা এবং আয়তন দুইদিক থেকেই এখন পর্যন্ত কাতার সবচেয়ে ছোট আয়োজক দেশ হিসেবে রেকর্ড করেছে। ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল হতে যাচ্ছে এবারের সংস্করণটি। আয়োজক কর্তৃপক্ষ প্রায় ২২০ বিলিয়ন ইউএস ডলার খরচ করেছে এই বিশ্বকাপ আয়োজন করার জন্যে। কাতার বিশ্বকাপে রেকর্ড কমসংখ্যক ভেন্যুতে খেলা হবে (৮টি)। এই ৮ টি মাঠে মোট ৬৫ টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। তার আগে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ভেন্যুতে খেলা হয়েছিল ২০০২ সালের কোরিয়া – জাপান বিশ্বকাপে (২০ টি)। তাছাড়াও কাতার বিশ্বকাপের ৮ টি ভেন্যু ৬০ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত। যেখানে দর্শকদের এক মাঠ থেকে আরেক মাঠে যেতে লাগবে গড়ে ৯০ মিনিটের মতো। এবারের সংস্করণটি সবচেয়ে কমদিনের মধ্যে সম্পূর্ন হবে। মাত্র ২৮ দিনে শেষ হয়ে যাবে বিশ্বকাপের এই জাকজমকপূর্ন মেগা ইভেন্ট। আর বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে রেকর্ড দেড় মিলিয়ন মানুষ কাতারে সশরীরে উপস্থিত থাকবে। উল্লেখ্য, কাতার এক মাত্র আয়োজক দেশ যারা এর আগে কখনোই ফুটবল বিশ্বকাপের মূল পর্বে উঠতে পারেনি। কাতার বিশ্বকাপের মাস্কটের নাম খধ’ববন এবং বলের নাম অষ জরযষধ। ১৯৫৮ সালের পর আবারো এই আসরের মাধ্যমে বিশ্বকাপের ফিরছে ওয়েলস! কাতারের দুই ভেন্যু এর মধ্যে দূরত্ব মাত্র ৯০ মাইলের! এবারের আসরে প্রতিটি স্টেডিয়ামে রয়েছে এয়ার কন্ডিশনের ব্যবস্থা যা এর আগে কখনো দেখা যায়নি কোনো ফুটবল আসরের। কাতার বিশ্বকাপের আটটি মাঠের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন মাঠ হচ্ছে লুসাইল স্টেডিয়াম (৮০,০০০) আর রাণী এলিজাবেথবিহীন প্রথম বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে কাতার বিশ্বকাপ। তিন বার বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠলেও এক বারও জিততে পারেনি ডাচরা। এ বার অন্যতম ফেভারিট হিসাবেই খেলতে নামবে তারা। দলের গোলকিপাররা হলেন জাস্টিন বিলো, রেমকে পাসভির, আন্দ্রিয়েস নোপার্ট। ডিফেন্ডাররা হলেন ভার্জিল ফান ডাইক, নাথান একে, দালে ব্লিন্দ, জুরিয়েল টিম্বার, ডেঞ্জেল ডামফ্রিস, স্তেফান দি ভ্রাই, মাথিয়াস দি লিট, টাইরেল মালাসিয়া, জেরেমি ফ্রিমপং। মিডফিল্ডারদের মধ্যে রয়েছেন ফ্রেঙ্কি দি জং, স্টিভন বার্গউইস, ডেভি ক্লাসেন, টিউন কুপমিনার্স, কোপি গাকপো, মার্তিন দে রুন, কেনেথ টেলর, জাভি সিমন্স। ফরোয়ার্ড লাইনে রয়েছেন মেম্ফিস দেপাই, স্টিভন বার্গউইন, ভিনসেন্ট জানসেন, লুক দে জং, নোয়া লাং, উট উইঘর্স্ট। নির্ধারিত সময়ের তিন দিন আগেই কাতার বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করেছে আর্জেন্টিনা। কোচ লিয়োনেল স্কালোনির বেছে নেওয়া দলে সে ভাবে কোনও চমক নেই। কোপা আমেরিকা এবং ফাইনালিসিমা জেতাতে যে সব ফুটবলার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই দলে সুযোগ পেয়েছেন। চোট থাকলেও পাওলো ডিবালাকে দলে নেওয়া হয়েছে। সুযোগ পেয়েছেন অ্যাঙ্খেল দি মারিয়াও। স্পেন দলে জায়গা পেলেন না ২০১০-এর বিশ্বজয়ী সের্খিয়ো র্যামোস।