কমিটির সদস্যরা হলেন- কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রাজিয়া সুলতানা কথা ও এনামুল হক তানান এবং যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শহীদুল হক শিশির ও উপ-আইন বিষয়ক সম্পাদক সাফরিন সুরাইয়া।
ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মচারীর ছেলে হওয়ায় পোষ্য কোটায় ভর্তি হন হাবিবুর রহমান লিটন। এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে অবস্থান নিয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। তবে তৃতীয় সারির নেতা থেকে ২০২২ সালে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ পেয়েছিলেন লিটন। তখন লিটনের বিরুদ্ধে সাধারণ সম্পাদকের পদ বাগিয়ে নিতে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেনের গুঞ্জন ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তা ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা সেসব অর্থের জোগান দেন বলেও জনশ্রুতি আছে। তবে সাধারণ সম্পাদকের পদ পাওয়ার পর বেপরোয়া হয়ে ওঠেন লিটন।
নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ২৩ জানুয়ারি হাবিবুর রহমান লিটনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন তার অনুসারীরা। ওইদিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন নেতা-কর্মীরা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ফের পরিবহন চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন তারা।
সেসময় লিখিত বক্তব্যে মো. হাবিবুর রহমান লিটনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। সেগুলো হলো- কর্মীদের নিয়ে চিন্তা না করে বিশ্ববিদ্যালয় পার্শ্ববর্তী এলাকায় ‘জমি দখল’, ব্যক্তিগত স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত থাকা, সংগঠনের কর্মীদের খোঁজ না রাখা, কমিটির দুই বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিতে সমন্বয় না করা, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়া সত্ত্বেও রাজনীতি বিকেন্দ্রীকরণ না করে নিজ হল কেন্দ্রিক চিন্তাচেতনা পোষণ করা, প্রত্যেকটি হলের কর্মীসভা করেও দীর্ঘদিন যাবৎ হল কমিটি না দেয়া এবং হল কমিটির বিষয়ে কথা বলতে চাইলে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করা।
তখন সমাবেশে লিখিত বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাজ্জাদ শোয়াইব চৌধুরী হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে নানা গুরুতর অভিযোগ ও নৈতিক স্খলনের প্রতিবাদে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।
মিছিল ও সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক লেলিন মাহবুব ও আরাফাত ইসলাম বিজয়, সাংগঠনিক সম্পাদক চিন্ময় সরকার, সহ-সভাপতি জাহিদুজ্জামান শাকিল ও ফয়সাল খান রকি এবং অর্থ-সম্পাদক তৌহিদুল আলম তাকিদ প্রমুখ নেতৃত্ব দেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি হলের ২ শতাধিক ছাত্রলীগ নেতাকর্মী অংশ নেন। এদিকে অবাঞ্ছিত করার পর থেকে লিটনকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সচরাচর চলাফেরা করতে দেখা যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হাবিবুর রহমান লিটনকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে এর আগে অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি সার্বক্ষণিক ক্যাম্পাসেই অবস্থান করি। তাই শুধুমাত্র নিজের স্বার্থের কথা ভাবি, এমন কথা ঠিক নয়। তাছাড়া জমি দখলের অভিযোগ ভিত্তিহীন। এমন অভিযোগের বিষয়েও কেউ কোনো উপযুক্ত প্রমাণ দিতে পারবে না।’
তবে এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান।
এর আগে, ২০২২ সালের ৩ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের শিক্ষার্থী আকতারুজ্জামান সোহেলকে সভাপতি ও দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান লিটনকে সাধারণ সম্পাদক করে এক বছরের জন্য জাবি শাখা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। তবে কমিটির মেয়াদ ১ বছর পূর্বে উত্তীর্ণ হলেও নতুন কমিটি এখনো গঠন করা হয়নি।