মাগুরা প্রতিনিধি : “রোগ প্রতিকারের চেয়ে রোগ প্রতিরোধই উত্তম” স্বাস্থ্য সহকারীর পরিচয়। স্বাস্থ্য সহকারী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরাধীন ইউনিয়ন পর্যায়ে সাবেক ওয়ার্ড ভিত্তিক রাজস্ব খাতের স্থায়ী কর্মচারী। এরা ৩য় শ্রেণি (১৬তম গ্রেড) ভুক্ত কর্মচারী হওয়া সত্ত্বেও প্রান্তিক পর্যায়ের রোগপ্রতিরোধ যোদ্ধা হিসেবে ইপিআই (সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচী) সহ নানাবিধ টেকনিক্যাল কার্যক্রমে সম্পৃক্ত।মাগুরায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক প্রস্তাবিত মাঠ পর্যায়ে কর্মরত স্বাস্থ্য সহকারীদের নিয়োগবিধি সংশোধন পূর্বক স্নাতক/সমমান সংযুক্ত করে ১৪ তম গ্রেড প্রদান ও ইন সার্ভিস ডিপ্লোমা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ১১ তম গ্রেড উন্নীতকরণ টেকনিক্যাল পদমর্যাদা প্রদান, পদোন্নতির ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে পরবর্তী উচ্চতর গ্রেড প্রদানসহ দফা দাবিনামা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে স্বাস্থ্য সহকারীদের অবস্থান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত। মঙ্গলবার ২৪ জুন ২০২৫ ইং মাগুরা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিসের সামনে বাংলাদেশ হেলথ এসিস্ট্যান্ট এসোসিয়েশন, মাগুরা সদর উপজেলা এর আয়োজনে ৬ দফা স্বাস্থ্য সহকারীদের দাবী কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে পালিত হয়।
বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ হেলথ এ্যাসিটেন্ট এসোসিয়েশন মাগুরা জেলা শাখা সাধারণ সম্পাদক মোঃ নাজমুল হোসেন, মাগুরা সদর উপজেলা শাখা সভাপতি মোঃ সালাহউদ্দিন, সদস্য মাজেদুল, শান্তনা রায়, নাসিমা। স্বাস্থ্য সহকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য পরিদর্শক সহ মোট ৫৪ জন উপস্থিত ছিলেন।স্বাস্থ্য সহকারীর দায়িত্ব ও কর্তব্য:প্রান্তিক জনযোষ্ঠীর রোগ প্রতিরোধ যোদ্ধা হিসেবে স্বাস্থ্য সহকারীগণ মাঠ পর্যায়ে আন্তঃব্যক্তি যোগাযোগের মাধ্যমে প্রতিটি ঘরে ঘরে স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেয়ার এছাড়াও সমাজের প্রচলিত রোগ হতে মুক্তির উপায় এবং নতুন রোগের আগমন প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং পরামর্শ প্রদান করেন। এছাড়াও নিম্নে উল্লেখিত স্বাস্থ্যসেবার গুরুত্বপূর্ন ও বহুমুখী কার্যক্রমে স্বাস্থ্য সহকারীগণ সম্পৃক্ত
১. সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (EPI) বাস্তবায়ন। জন্য থেকে ১৫ মাস বয়স পর্যন্ত শিশুর টিকাদান। ১৫-৪৯ বছর বয়সী নারীদের টিটি/টিডি টিকা২. গর্ভবতী মা ও শিশুদের সেবা প্রদান৩. গর্ভকালীন ৪টি চেকআপ নিশ্চিত করা। প্রসব- পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সেবা (ANC ও PNC) প্রদান। মা ও শিশুর পুষ্টি, পরিচর্যা ও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত পরামর্শ দেওয়া। নবজাতকের যত্ন সম্পর্কে অবহিত করা। টিকার সময়সূচি অনুযায়ী মাঠে কাজ করা ও রিপোর্ট প্রদান। র সময়সূচি অনুযায়ী মাঠে ব৪. জাতীয় ও বিশেষ স্বাস্থ্য কার্যক্রমে অংশগ্রহণ।DESH # করোনা কালীন টিকাদান কার্যক্রমে মাঠপর্যায়ে নিবন্ধন, ফলোআপ, জনসচেতনতা ও টিকাদান কেন্দ্রে সেবা প্রদান।# MR ক্যাম্পেইন (Measles-Rubella): শিশুদের হামের ও রুবেলার টিকা দেওয়ার সময় সরাসরি অংশগ্রহণ।# Vitamin A Plus ক্যাম্পেইন: ৬ মাস থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো।# কৃমিনাশক ক্যাম্পেইন: স্কুলে ও কমিউনিটিতে খুদে ডাক্তারের মাধ্যমে শিশুদের কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়ানো।৫ . স্বাস্থ্য শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধি: স্কুল পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রদান। পুষ্টি, পরিবেশ স্বাস্থ্য, ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা, ডায়রিয়া ও ডেঙ্গু প্রতিরোধ ৬. ইত্যাদি বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি। মা সমাবেশ, উঠান বৈঠক ও গ্রুপ বৈঠকের মাধ্যমে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা।কমিউনিটি পর্যায়ে নিয়মিত সেবা প্রদান এলাকা ভিত্তিক জনগণের স্বাস্থ্য তথা সংগ্রহ ও হালনাগাদ করা। রোগীদের উপসর্গ যাচাই করে প্রাথমিক পরামর্শ এবং প্রয়োজনে রেফার করা। বিভিন্ন সংক্রামক রোগের (ডায়রিয়া, মালেরিয়া, ডেঙ্গু ইত্যাদি) প্রাদুর্ভাব হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ। সংক্রামক, অসংক্রামকরোগ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি।৭. জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতিতে কার্যকর ভূমিকা পালন মহামারী বা প্রকতিক দুর্যোগে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কাজে সরকারের পক্ষ থেকে জনসেবা নিশ্চিত করা। CUস কাজে সহযোগিতা। করোনা বা অন্যান্য জরুরী পরিস্থিতিতে৮ . স্বাস্থ্য সহকারীগণ সপ্তাহে ৩দিন কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে থাকেন। GOGIAস্বাস্থ্য সহকারীরা অপ্রতুল সুযোগ-সুবিধা ও সীমিত জনবল নিয়েও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তাদের ভূমিকা দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে এগিয়ে নিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য সহকারী পদটি সৃষ্টি হয়। তখন থেকেই দেশের প্রান্তিক মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে তারা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। দীর্ঘ চার দশকের বেশি সময় ধরে তারা প্রথম সারির যোদ্ধা হিসেবে জনগণের স্বাস্থ্যসেবায় নিবেদিত থেকেছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আজ পর্যন্ত তাদের পদে কোনো পরিবর্তন হয়নি, বেতন কাঠামোতে রয়েছে চরম বৈষম্য। তবুও তারা থেমে থাকেনি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে যে সাফল্য এসেছে, তার পেছনে স্বাস্থ্য সহকারীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। শিশু ও মাতৃ মৃত্যুর হার হ্রাস, পোলিও নিয়ন্ত্রণ, বসন্ত নির্মূল এবং ১০টি মারাত্মক রোগের টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নে তারা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে।স্বাস্থ্য সহকারীদের অর্জন:স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ অর্জন করেছে ভ্যাকসিন হিরো অ্যাওয়ার্ড, সাউথ-সাউথ পুরস্কার, এবং দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠ টিকাদানকারী দেশের মর্যাদা। এছাড়া MDG (Millennium Development Goals) SDG (Sustainable Development Goals) অর্জনে তাদের ভূমিকা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।আজ সময় এসেছে তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের পদের উন্নয়ন, বেতন বৈষম্য দূরীকরণ ও চাকরির যথাযথ মর্যাদা নিশ্চিত করা। স্বাস্থ্য সহকারীরা এ দেশের জনগণের জন্য কাজ করে, তাই দেশবাসীর সকলের প্রতি বিনীত অনুরোধ তাদের ন্যায্য দাবীর প্রতি সকলের অকুষ্ঠসমর্থন প্রত্যাশা করি। স্বাস্থ্যের অধিকার রক্ষায় তাদের পাশে দাঁড়ান।স্বাস্থ্য সহকারীদের দাবী।১. নিয়োগবিধি সংশোধন করে স্নাতক/সমমান এবং ১৪ তম গ্রেড প্রদান।২. ইন সার্ভিস ডিপ্লোমা প্রশিক্ষণ সনদ প্রাপ্তদের ১১তম গ্রেড প্রদানসহ টেকনিক্যাল পদমর্যাদা প্রদান।৩. পদোন্নতির ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে পরবর্তী উচ্চতর গ্রেড নিশ্চিত করতে হবে।৪. স্বাস্থ্য সহকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক, স্বাস্থ্য পরিদর্শকগণ পূর্বের নিয়োগ বিধি দ্বারা নিয়োগপ্রাপ্ত হলেও সকলকেই প্রশিক্ষণ বিহীন স্নাতন পাশ স্কেলে আত্মীকরণ করতে হবে।৫. বেতন স্কেল উন্নতী/পুনঃনির্ধারনের পূর্বে স্বাস্থ্য সহকারী/সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক/স্বাস্থ্য পরিদর্শকগণ যত সংখ্যক টাইম স্কেল (১/২/৩ টি)/উচ্চতর স্কেল (১/২ টি) প্রাপ্ত/প্রাপ্ত হয়েছেন তা উন্নীত পুনঃনির্ধারিত বেতন স্কেলের সাথে যোগ করতে হবে।৬. পূর্বে ইন সার্ভিস ডিপ্লেমা (এস আই টি) কোর্স সম্পূর্ণকারী স্বাস্থ্য সহকারী/সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক/স্বাস্থ্য পরিদর্শকগণ ডিপ্লেমা সম্পর্ণকারী সমমান হিসেবে গণ্য করতে হবে।