মাগুরা লক্ষীপুর গ্রামে স্বাস্থ্য সম্মত পাঁকা টয়লেট ও বিনামূল্যে উপকরণ বিতরণ কর্মসূচী
স্টাফ রিপোর্টার:সুবির ঘোষ।
মাগুরা সদর উপজেলার রাঘবদাইড় ইউনিয়নের হাট লক্ষীপুর গ্রামে স্বাস্থ্য সম্মত সেমি পাঁকা টয়লেট স্থাপন ও বিতরণ কর্মসূচি-২য় পর্যায় বিনামূল্যে উপকরণ (ল্যাট্রিন, বালতি, বদনা ও ব্রাশ বিতরণ অনুষ্ঠান ২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়। মঙ্গলবার ১৪ অক্টোবর রাঘবদাইড় ইউনিয়নের লক্ষীপুর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পাড়ায় বাস্তবায়নকারী সংস্থা পল্লী প্রকৃতি ও বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশন এর সহযোগিতায় উপকরণ বিতরণ ও আলোচনা করা হয়।
বিনামূল্যে ১৫টি সেমি পাঁকা টয়লেট, ১৫টি বালতি, বদনা ও ব্রাশ বিতরণ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মাগুরা পল্লী প্রকৃতি নির্বাহী পরিচালক মোঃ শফিকুর রহমান পিন্টু।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, মাগুরা পল্লী প্রকৃতি চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আব্দুর রাজ্জাক।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, রোভা ফাউন্ডেশন নির্বাহী পরিচালক কাজী কামরুজ্জামান, সেইভ দ্যা উইমেন এন্ড চিলড্রেন নির্বাহী পরিচালক সাবিনা ইয়াসমিন মেরী, বিশিষ্ট সমাজসেবক ও মাগুরা জেলা বিএনপি সদস্য নাজমুল হাসান লিটন।
মাগুরা পল্লী প্রকৃতি চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মাগুরা জেলার সদর উপজেলার রাঘবদাইড় ইউনিয়নের লক্ষীপুর ও পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের রায়গ্রাম গ্রামে পল্লী প্রকৃতি এনজিও’র উদ্যোগে ১৫টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি পরিবারকে স্বাস্থ্য সম্মত সেমি পাঁকা টয়লেট তৈরী করে আনুষ্ঠানিক ভাবে হস্তান্তর করা হয়। তাহা ছাড়া, ১৫টি পরিবারকে একটি করে বালতি, বদনা ও ব্রাশ প্রদান করা হয়। বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে এই প্রকল্পের আওতায় এই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি মানুষের সংগে বারংবার সচেতনতামূলক উঠান বৈঠক করা হয়, যা অব্যাহত আছে। বর্তমানে অবহেলিত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির মানুষ স্যানিটেশনের আওতায় ছোট বড়, নারী পুরুষ সকল মানুষ পাঁকা ল্যাট্রিন ব্যবহার করছে এবং স্যানিটেশন সংক্রান্ত অব্যবস্থা দূর হয়েছে। এতে করে, ধীরে ধীরে এলাকার পরিবেশের উন্নয়ন হয়েছে, মানুষের স্বাস্থ্যের উন্নতি হচ্ছে, তাদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। এলাকার মানুষ ল্যাট্রিন গুলি পেয়ে অত্যন্ত খুশী।
সরজমিনে দেখা যায়, লক্ষীপুর গ্রাম এখন শত ভাগ স্যানিটেশনের আওতায় লক্ষীপুর গ্রামে মোট ৮২টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি পরিবারের বসবাস। দুই দফা জরিপ কাজ করে দেখা যায় মোট ৮২টি পরিবারের মধ্যে ৫৭ টি পরিবারে কোন ল্যাট্রিন নাই। পরিবারের সদস্যরা বাগান, মাঠ, বসবাসের নিকটস্থ খোলা জায়গায় ছেড়া কাপড় বা পলিথিন দিয়ে ঘিরে উন্মুক্ত ভাবে প্রাকৃতিক কাজ সম্পন্ন করে থাকে। এই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি পল্লীতে মোট ৮২টি পরিবার বসবাস করে। প্রতিটি পরিবারের রয়েছে ১-২ শতক জমির উপর ঝুপড়ি ঘর তৈরী করে বসবাস করে। প্রতিটি ঘর প্রায় একটির সাথে আরেক টি লাগানো, এই জনগোষ্ঠীর কোন চাষের জমি নাই। ঘরে বসে বাঁশ-বেতের কাজ তাদের প্রধান পেশা। অনেকে সেলুনে কাজ করে বা অন্যের জমিতে দিনমজুরী করে থাকে। তাদের দৈনিক বা মাসিক আয় অত্যন্ত কম। সরকারী কোন সুযোগ-সুবিধা এরা পায় না বললেই চলে।
এই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি সমাজের মানুষ শিক্ষা সহ সকল প্রকার নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তাদের বসবাসের জায়গা এবং স্যানিটেশন ব্যবস্থা অত্যন্ত খারাপ। চারিদিকে দুর্গন্ধ, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, মানুষ রুগ্ন স্বাস্থ্যের অধিকারী, সাধারন রোগ-ব্যাধি সম্পর্কে ধারনা নাই বললেই চলে, তাদের মধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সচেতনতা একবারেই কম।
এমতাবস্থায়, মাগুরায় জেলায় কর্মরত বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশনের সহযোগি ৩টি সংস্থা রোভা ফাউন্ডেশন, সেইভ দ্যা উইমেন এ্যান্ড চিলড্রেন (এসডব্লিউসি) ও পল্লী প্রকৃতি সম্মিলিত ভাবে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির স্যানিটেশন সমস্যা দূরীকরণের জন্য কাজ করতে সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। তার অংশ হিসাবে বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশনের বিশেষ প্রকল্প বরাদ্ধের টাকায় জরিপ কৃত ৫৪টি পরিবারকে পর্যায় ক্রমে ৫৭টি পরিবারকে বিনামূল্যে ৫৭টি স্বাস্থ্য সম্মত সেমি-পাঁকাটয়লেট স্থাপন করে হস্তান্তর করা হয়। এই প্রকল্পের আওতায় এই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি মানুষের সংগে বারংবার সচেতনতামূলক উঠান বৈঠক করা হয়, যা অব্যাহত আছে। এখানে রোভা ফাউন্ডেশন ৩৪টি, পল্লীপ্রকৃতি ১১টি এবং এসডব্লিউসি ১২টি ল্যাট্রিন প্রদান করে। বর্তমানে অবহেলিত লক্ষীপুর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি পল্লীটি শতভাগ স্যানিটেশনের আওতায়, কেহ আর স্যানিটেশনের বাহিরে নাই, ছোট বড়, নারী পুরুষ সকল মানুষ পাঁকা ল্যাট্রিন ব্যবহার করছে এবং স্যানিটেশন সংক্রান্ত অব্যবস্থা দূর হয়েছে। এতে করে, ধীরে ধীরে এলাকার পরিবেশের উন্নয়ন হয়েছে, মানুষের স্বাস্থ্যের উন্নতি হচ্ছে, তাদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। এলাকার মানুষ ল্যাট্রিন গুলি পেয়ে অত্যন্ত খুশী। উল্লেখ্য, ১০ জুন, ২০২৫ খ্রীঃ বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডঃ জিল্লুর রহমান “স্বাস্থ্য সম্মত সেমি-পাঁকা টয়লেট স্থাপন ও বিতরণ কর্মসূচি”র ২য় পর্যায়ের কাজটি সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। তিনি ল্যাট্রিন গুলি ঘুরে দেখেন এবং উপকারভোগিদের সংগে মতবিনিময় করেন। তিনি উপকারভোগিদেরকে সঠিক ভাবে ল্যাট্রিন ব্যবহার ও ব্যবহার পরবর্তী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য পরামর্শ প্রদান করেন। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ঠ প্রতিষ্ঠানগুলোকে কর্ম এলাকায় এমন অবহেলিত কমিউনিটির উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য পরামর্শ দেন।
ব্যাসিক নিউজ ২৪
বার্তা সম্পাদক মোঃ ফারুক আহমেদ