তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার সংখ্যালঘু হিন্দুদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা দেওয়ার ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ। এ বছর নির্বিঘ্নে দুর্গাপূজা করাটা তারই প্রমাণ। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক শুধু দুই দেশের মধ্যে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির ওপরই নির্ভরশীল নয়।
গতকাল কলকাতা প্রেস ক্লাবে ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন’ শিরোনামে আলোচনা সভার ফাঁকে গণমাধ্যমের কর্মীদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।হাছান মাহমুদ বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর বাংলাদেশে দুর্গাপূজার মন্ডপের সংখ্যা অনেক বেশি ছিল। বাংলাদেশে ২ কোটি হিন্দু আছে। ৩৩ হাজার মন্ডপে দুর্গাপূজা হয়েছে। দুর্গাপূজায় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আমাদের দল সক্রিয় ছিল। আমাদের দলের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া ছিল প্রত্যেকটি পূজামন্ডপে পাহারা দেওয়ার। গতবার যারা পূজায় বিশৃঙ্খলা করেছিল তাদের মুখোশ খুলে গেছে। জামায়াত-বিএনপির ছত্রছায়ায় তারা এ কাজ করেছে। এবার আগে থেকেই বলা হয়েছে, দুষ্কৃতকারীরা আবার এ অপকর্ম করতে পারে, সে কারণেই সতর্ক দৃষ্টি রাখা, প্রয়োজনে পাহারা দেওয়া। সুতরাং সবাই সতর্ক ছিল। সে কারণে অপকর্ম হয়নি।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, দুই দেশের সরকারের সম্পর্কের চেয়ে উভয় দেশের জনগণের সম্পর্কই কূটনৈতিক সম্পর্ককে জোরদার করতে সাহায্য করেছে। আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক শুধু তিস্তার (পানি ভাগাভাগি) ওপর নির্ভরশীল নয়। আমি যখনই ভারতে আসি, আমাকে এ প্রশ্ন করা হয়। আমাদের সম্পর্ক বৈচিত্র্যময়। বাংলাদেশ এখন গবাদিপশু উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ, তাই গরু পাচার না হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাইমুম সারোয়ার কমল, কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস, কলকাতা প্রেস ক্লাবের সভাপতি স্নেহাশীস সুর প্রমুখ।
কোনো বেড়াজালই আমাদের ভালোবাসা, মৈত্রীর সীমারেখা টানতে পারবে না : তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, কাঁটাতারের বেড়া বা রাজনৈতিক সীমারেখা আমাদের বিভক্ত করে দিলেও আমরা একই ভাষায় গান গাই, একই পাখির কলতান শুনি। তাই কোনো বেড়াজালই আমাদের ভালোবাসা, মৈত্রীর সীমারেখা টানতে পারবে না। গতকাল তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং কলকাতার বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের ব্যবস্থাপনায় কলকাতার রবীন্দ্র সদনে চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের তথ্য প্রযুক্তি এবং পর্যটন দফতরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়, বিশেষ অতিথি ছিলেন সাইমুম সারোয়ার কমল এমপি ও চলচ্চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কলকাতার উপ-হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস।
অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অভিনেত্রী জয়া আহসান, অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, সংগীত শিল্পী সাব্বির আহমেদ, প্রিয়াঙ্কা বিশ্বাস প্রমুখ। দুই দেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। অনুষ্ঠান শেষে দর্শকদের অনুরোধে ‘আমি বাংলায় গান গাই…’ গেয়ে শোনান বাবুল সুপ্রিয়।
এদিকে উৎসবের প্রথম দিনই ‘হাওয়া’ দেখতে নন্দনে ভিড় উপচে পড়ে। শো শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই প্রেক্ষাগৃহে লম্বা লাইন দেখা যায় দর্শকদের। মূল অনুষ্ঠান শেষে বাবুল সুপ্রিয়কে একটি নৌকা, পাঞ্জাবি এবং তার স্ত্রীকে জামদানি শাড়ি উপহার দেন বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী। গৌতম ঘোষকে নৌকা ও পাঞ্জাবি তুলে দেন মন্ত্রী।
সাহিত্য, সংস্কৃতি কিংবা বাংলা ভাষারও কোনো সীমানা হয় না : তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, পাখি, পানি বা বাতাসের যেমন সীমানা হয় না, তেমনিই বাঙালির শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি কিংবা বাংলা ভাষারও কোনো সীমানা হয় না। আর সেদিকে লক্ষ্য রেখেই পদ্মার দুই পাড়ের বাঙালিরা মিলিত হলো কলকাতায়। গান, আড্ডা, গল্প, আলাপচারিতা- সব মিলিয়ে পরিণত হয়েছে এক মিলন মেলায়। যেই মিলন মেলার আয়োজন করেছিল কলকাতার ইন্দো বাংলা প্রেস ক্লাব। ‘সীমানা পেরিয়ে আমরা বাঙালি’ শিরোনামে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল কলকাতার অভিজাত স্প্রিং ক্লাবে। গতকাল সকালের এ অনুষ্ঠানে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের খাদ্য ও সরবরাহ মন্ত্রী রথীন ঘোষ, সাইমুম সারোয়ার কমল এমপি, কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস, ইন্দো বাংলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি কিংশুক চক্রবর্তী প্রমুখ।