মাগুরা জেলা পূজা উযযাপন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর মাগুরা শহরের ছানার বটতলা, জামরুল তলা, নিজনান্দুয়ালী সহ মোট ৯৬টি মন্দিরে কাত্যায়নী পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আর এই পূজাকে ঘিরে সার্বজনিন এই উৎসব উপলক্ষে ইতোমধ্যেই শহরের বিভিন্ন প্রবেশ নানা রঙে ও আলোকসজ্জায় সাজানো হয়েছে।
মাগুরা জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক উত্তল দত্ত জানান, ১৯৫০ সালের দিকে শহরে পারনান্দুয়ালি এলাকার সতিশ মাঝি আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রথম এ পূজা শুরু করেন। পেশায় তিনি মুদি ব্যবসায়ি হলেও তার গোষ্ঠীর অধিকাংশ মানুষ মৎস্যজীবী হওয়ায় দুর্গা পূজার চেয়ে এই পূজার প্রতি বেশি আগ্রহ দেখান।
ভরা বর্ষা মৌসুমে পেশাগত কারণে স্থানীয় মৎসজীবিরা বিভিন্ন নদীতে মাছ শিকারে যেত। যে কারণে সে সময়ে অনুষ্ঠিত দুর্গা পূজায় অংশ নেওয়া তাদের জন্য দুরূহ বিষয়। বিধায় গোষ্ঠীগত মানুষের সুবিধার্থে তিনি দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা সংক্ষিপ্ত করে প্রথম একক আয়োজনে তার এলাকায় কাত্যায়নি পূজা শুরু করেন। সেটিই ব্যাপকতর হতে হতে এখন মাগুরায় এটি ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা ছাড়িয়ে সার্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে।
শাস্ত্রমতে দাপর যুগে শ্রীকৃষ্ণের জন্মের আগে গোপবালা বৃন্দ তীরে শ্রীকৃষ্ণকে ঈশ্বর, বন্ধু, স্বামী, পুত্র হিসাবে আরাধনা করত। তাদের একমাসব্যাপি আরাধনা সে সময় কাত্যায়নি পূজা হিসেবে চিহ্নিত হত। যার সময়কাল ছিল কার্তিক ও অগ্রহায়ন মাস। প্রতিমা স্থাপনের ক্ষেত্রে দুর্গা পূজার আদলেই সবকিছু। তবে অতিরিক্ত হিসেবে দেবি দুর্গার কোলে শ্রীকৃষ্ণের একটি মূর্তি স্থাপন করা হয়। যার অর্থ দেবি দুর্গার আরাধনার মাধ্যমে কৃষ্ণের সান্নিধ্য পাওয়া। যেটি কাত্যায়নি পূজার ধর্মীয় যোগসূত্র বলে আয়োজকরা জানান।
দরিমাগুরা সানা বাবুর বটতলা পূজা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বিধান সাহা বলেন, করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর কাত্যায়নী পূজা অনুষ্ঠিত হলেও বসেনি মেলা। জমেনি উৎসব। তাই এবারের আয়োজন নিয়ে সাধারণ ভক্তবৃন্দ ও আয়োজকেদের মধ্যে রয়েছে অধিক উত্সাহ। এবারের উত্সবে পার্শ্ববর্তি দেশ ভারতসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লক্ষ লক্ষ ভক্ত ও দর্শনার্থীদের সমাগম ঘটবে বলে আশা করছি।
এ মণ্ডপের পুরোহিত বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য্য বলেন, হেমন্তকালিন পূজা ক্যাত্যায়নী। দুর্গা পূজার মতোই এর আয়োজন। আজ ষষ্ঠী দিয়ে শুরু হলো। দশমীতে শেষ হবে। তবে মেলা চলবে পূজার পরও প্রায় এক মাস। তবে এই পূজাকে সামনে রেখে মাগুরায় বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ভক্তবৃন্দের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মাবলম্বিদেরও সমাগম ঘটে থাকে। তাই এটি সর্বজনীন উত্সব। মাগুরা জেলার ঐতিহ্য।
এদিকে কাত্যায়নি মেলায় অংশ নিতে নানা বিনোদনের আয়োজন করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত ব্যবসায়ীরাও তাদের পসরা সাজিয়ে বসতে শুরু করেছে। আর এই মেলা চলাকালিন সময়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকেও চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
মাগুরা পুলিশ সুপার মশিউদ্দৌলা রেজা জানান, দুই বছর পর মাগুরায় কাত্যায়নী মেলা বসছে। অন্তত ১০ লক্ষ লোকের সমাগম ঘটবে। পূজা ও মেলা চলাকালীন সময়ে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ৪ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।