• Fri. May 3rd, 2024

Basic News24.com

আমরা সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ইবাদতের শ্রেষ্ঠ সময় যৌবনকাল

Bybasicnews

Aug 27, 2022

যৌবনকাল মানুষের জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। এ সময়ের ইবাদতের মর্যাদাও বেশি। মহান আল্লাহ মানুষকে তাঁর এই বিশেষ নিয়ামত দিয়ে পরীক্ষা করেন। যাঁরা তাতে উত্তীর্ণ হন, তাঁরাই সফল হন। আর যাঁরা তা অবহেলা করবেন, তাঁরা ব্যর্থ। যে ব্যক্তি তাঁর যৌবনকে আল্লাহর ইবাদতে ব্যয় করবেন, কঠিন কিয়ামতের দিন তিনি মহান আল্লাহর আরশের ছায়াতলে আশ্রয় পাবেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ সাত ব্যক্তিকে তাঁর (আরশের) ছায়ায় স্থান দেবেন; যেদিন তাঁর ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না। (এর মধ্যে) ওই যুবক, যাঁর যৌবন অতিবাহিত হয় আল্লাহর ইবাদতে আনুগত্যে। (বুখারি: ৬৬০; মুসলিম: ১০৩১)

যৌবনকাল মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি নিয়ামত। এ সময় মানুষের ইবাদতের শক্তি ও সুস্থতা দুটিই থাকে। এ সময় একজন মানুষ যতটা শুদ্ধতা ও দৃঢ়তার সঙ্গে আমল করতে পারে, বৃদ্ধ হয়ে গেলে তা অনেক সময় সম্ভব হয় না। তাই এই মহামূল্যবান নিয়ামত কোনোভাবেই অবহেলায় কাটানো উচিত নয়। কারণ, কিয়ামতের দিন যৌবনকালের সময়ের হিসাব নেওয়া হবে। (তিরমিজি: ২৪১৬)

ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা সব নবীকে যৌবনকালে নবুয়ত দান করেছেন, যৌবনকালেই আলেমদের ইলম প্রদান করা হয়।’ আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তিনি (মুসা আ.) যখন পূর্ণ যৌবনে পৌঁছালেন, তখন তাঁকে প্রজ্ঞা ও ব্যুৎপত্তি দান করলাম।’ (সুরা-২৮ কাসাস, আয়াত: ১৪)

পবিত্র কোরআনে বর্ণিত আসহাবে কাহাফের সাত ধার্মিক ব্যক্তিও ছিলেন যুবক। যাঁরা এক আল্লাহর ইবাদতে বিশ্বাসী ছিলেন। যাঁদের শত্রুর হাত থেকে আল্লাহ তাআলা রক্ষা করেছিলেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘(হে রাসুল!) আপনার কাছে তাঁদের ইতিবৃত্ত সঠিকভাবে বর্ণনা করেছি। তাঁরা ছিলেন কয়েকজন যুবক। তাঁরা তাঁদের পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছিলেন এবং আমি তাঁদের সৎ পথে চলার শক্তি বাড়িয়ে দিয়েছিলাম।’ (সুরা-১৮ কাহাফ, আয়াত: ১৩)

ইসলাম গ্রহণেও যুবকেরা ছিলেন অগ্রণী। বনি ইসরায়েলের যুবকেরাই প্রথম মুসা (আ.)–এর ওপর ইমান এনেছেন। হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর দাওয়াতে প্রথম শতাধিক যুবকই ইসলাম গ্রহণ করেছেন। আর তাঁদের বেশির ভাগ ছিল ১৫ থেকে ৪০ বছর বয়সের। ইমাম ইবনে কাসির (রা.) বলেন, ‘আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের আহ্বানে সাড়াদানকারীরা বেশির ভাগই ছিলেন যুবক।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির)

পুরো জীবনের ব্যাপারে যদিও আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে, কিন্তু যৌবনকালের ব্যাপারে বিশেষভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন এ বিষয়গুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হওয়ার আগ পর্যন্ত আদম সন্তানের দুই পা আল্লাহ তাআলার কাছ থেকে এক কদমও নড়তে পারবে না: তার জীবনকাল সম্পর্কে, কীভাবে তা অতিবাহিত করেছে; তার যৌবনকাল সম্পর্কে, কী কাজে তা ব্যয় করেছে, সম্পদ কীভাবে আয় করেছে আর কোন পথে ব্যয় করেছে এবং তার জ্ঞান সে সঠিকভাবে অনুসরণ করেছে কি না?’ (তিরমিজি: ২৪১৭)

আল–কোরআনে মহান আল্লাহ সময়ের কসম করেছেন, মানুষকে অকল্যাণ থেকে বাঁচানোর জন্য সময়কে গুরুত্ব দিতে তিনি আদেশ করেছেন। যুবকেরাই যুগে যুগে সব পাপ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। প্রত্যেক জাতির ইতিহাসেই দেখা যায়, তাঁদের মুক্তি, শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে যুবকেরাই প্রধান ভূমিকা পালন করেছেন। তেমনই এক যুবক ছিলেন ইব্রাহিম (আ.), যিনি প্রথম নিজ গোত্রের মূর্তিপূজার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের কেউ কেউ বলল, আমরা শুনেছি, এক যুবক এই মূর্তিগুলোর সমালোচনা করেন। তাঁকে বলা হয় ইব্রাহিম।’ (সুরা-১৪ ইব্রাহিম, আয়াত: ৬০)।

যৌবনের উদ্যম ও শক্তিকে সঠিক পন্থায়, সঠিক কাজে ব্যয় করা হলে সুষ্ঠু ও সুন্দর সমাজ গড়ে ওঠে। কারণ, যুবকেরাই চালিকা শক্তি। তাঁরা সুসংহত হলে গোটা জাতি সুসংহত হয়, তাঁরা পথ হারালে গোটা জাতিই পথ হারায়। প্রত্যেক যুবকের উচিত তাঁর যৌবনকে পাপমুক্ত রেখে আল্লাহর ইবাদতে সাজানো। আল্লাহকে ভয় করা। মানুষের উপকার করা। সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে বাধা প্রদান করা। তাহলেই আমাদের সমাজ আরও সুন্দর ও নিরাপদ হবে ইনশা আল্লাহ!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *